ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ ‘ঊনিশ শ’ ‘ষাট’-এর দশক বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দশক হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। কী রাজনীতি, কী শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, কী বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রম মানুষ এই দশকে হয়ে উঠেছিলো দুর্দমনীয় প্রতিবাদের এক মূর্ত প্রতীক।
এ ক্ষেত্রে সাহিত্যের বিষয়টিই বিবেচনায় আনা যাক। কথাশিল্পী রশীদ হায়দার এই দশকের অন্যতম প্রতিনিধি । ষাট-এর দশকের গোড়ায় ‘কাক’ ও ‘বাথান’ গল্প লিখে তিনি সুধী পাঠকসমাজের যে দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন, তা উত্তরোত্তর বুদ্ধি পেয়েছে, তিনি নিজেকে সুপ্রিতিষ্ঠিত করেছেন তার নানা বিষয়ের উপস্থান বৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র্যে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, গ্রাম-বাংলার জীবন, সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ , আশা-নিরাশা-প্রত্যাশার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, সবকিছু মিলিয়ে রশীদ হায়দার মানবচরিত্র অঙ্কন করেন গভীর মমতায় , আন্তরিকতায়।
‘গল্পসমগ্র’ এর রশীদ হায়দারকে পাওয়া যাবে এমনই মমতা, আন্তরিকতা ও জীবনের প্রতি অকৃত্রিম অঙ্গীকারে।
রশিদ হায়দার
রুটি-রুজির খাতায় জন্ম তারিখ ১৩ মে ১৯৪২ হলেও রশীদ। হায়দারের সঠিক জন্মদিন ১৫ জুলাই ১৯৪১। লেখাপড়া পাবনা, ঢাকা ও নিউ ইয়র্কে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে থেকেই সাপ্তাহিক ‘চিত্রালী’-তে পার্টটাইম চাকুরি; পরে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলা একাডেমি থেকে পরিচালক হিসেবে অবসর নেবার পর পাক্ষিক অনন্যা, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রে পরামর্শক, ২০০৯ থেকে ২০১৪ পাঁচ বছর নজরুল ইন্সটিটিউটে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং পুরােপুরি অবসর গ্রহণ । লেখালেখি শুরু ১৯৫৩ সাল থেকে; তবে নিয়মিত সাহিত্য চর্চার সূচনা ১৯৬৩ সালে। প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ : ১৯৬৭-তে; গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য, অনুবাদ, সম্পাদনা ইত্যাদি মিলিয়ে গ্রন্থসংখ্যা ৭০-এর অধিক। সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘একুশে পদক’, ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’, ‘হুমায়ূন কাদির পুরস্কার’, ‘রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা’ ‘পাবনা সমিতি স্বর্ণপদক’ ইত্যাদি লাভ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তাঁর অসামান্য অবদান হচ্ছে বাংলা একাডেমি থেকে ১৩ খণ্ডে প্রকাশিত ‘স্মৃতি : ১৯৭১ ও সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত ১৯৭১ : ভয়াবহ অভিজ্ঞতা সম্পাদনা । ২০১৩ সালে দিলীর ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট বাংলাদেশের প্রথম যে-দুজন লেখকের গল্পগ্রন্থ প্রকাশ করে, রশীদ হায়দার তাদের একজন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক ও কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা প্রদান। বিবাহিত। স্ত্রী আনিসা আখতার । দুই কন্যা হেমা ও ক্ষমা । অবসরে রশীদ হায়দার ব্যস্ত আছেন লেখা ও পড়া নিয়ে। ভালােবাসেন আড্ডা দিতে, ভ্রমণ করতে, টিভি-তে ফুটবল ও ক্রিকেট দেখতে এবং তিনবেলা ভাত খেতে।