একটি ঘরও একটি দেশের রাজনীতির মতো জটিলতা নিয়ে বেড়ে ওঠে। সাংসারিক জীবনে নারী সেই ঘর-গেরস্থালির রাজনীতির শিকার। সে-ও হয়ে যায় একটি বিশেষ চরিত্র।এই গ্রন্থে মােট সতেরটি প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে। প্রতিটি প্রবন্ধে বাংলাদেশের সমাজ প্রেক্ষিতে নারীর অবস্থা ও অবস্থানের বিশ্লেষণ করা হয়েছে। নারীবাদী প্রেক্ষিত থেকে সমাজ-ভাবনার চিত্রটি উঠে এসেছে। প্রবন্ধগুলােতে। আমাদের বিশ্বাস ঘরগেরস্থির রাজনীতি শিরােনামে প্রবন্ধটিতে ভাষা বিষয়ে যে ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে নতুনত্বের দাবিদার। পুরুষতন্ত্র ভাষাকে নিয়ন্ত্রিত করে নারীকে অবদমনের যে পরিসর তৈরি করেছে দীর্ঘ সময় ধরে, এই প্রবন্ধ থেকে তার স্বরূপটি বােঝা যায়। নারীর প্রজ্ঞা কতভাবে আলােকিত করতে পারে সমাজ ও রাষ্ট্রকে সেটিও উন্মােচন করা হয়েছে। দেখানাে হয়েছে দুর্নীতি থেকে নারীও মুক্ত নয়। দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারীর জীবনের নানা দিক। দুর্নীতির। কবলে নিমজ্জিত হয় নারীর সুস্থ চিন্তাও। ক্ষমতা পরাভূত করে নারীকে। সাংস্কৃতিক চেতনা নারীর জীবনের। ইতিবাচক-নেতিবাচক ধারণায় পুরুষশাসিত সমাজের ভিন্ন মাত্রা। সাংস্কৃতিক বােধ তৈরি করতে পারে জেন্ডার সমতার ক্ষেত্রটি, কিন্তু সহজে হয় না। যেটুকু হয় তা। আমূল পরিবর্তনের গতিকে বেগবান করে না।
সেলিনা হোসেন
সেলিনা হোসেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক, যিনি ১৪ জুন ১৯৪৭ তারিখে রাজশাহী শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এ কে মোশাররফ হোসেন ছিলেন রেশমশিল্প কারখানার পরিচালক এবং মাতা মরিয়মন্নেসা বকুল। ষাটের দশকের মধ্যভাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময়ে লেখালেখির শুরু করেন এবং তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ "উৎস" ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত হয়। সেলিনা হোসেনের লেখালেখির কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য, এবং তিনি বাংলার লোক-পুরাণের চরিত্রসমূহকে নতুনভাবে তুলে এনেছেন। তাঁর উপন্যাসে সমকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট, ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ প্রতিফলিত হয়েছে। সাহিত্যে তাঁর পরিচিতি শুধু কথাসাহিত্যেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রবন্ধেও তিনি শক্তিশালী ও শাণিত গদ্য নির্মাণে দক্ষ।