ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ ”সাদাতের ‘গল্পছবি’র ছবিগুলো এবং প্রতিটি ছবির মাত্র আট দশ লাইনের একেকটি গল্প যেন ভেতরের অন্য কোনো জীবনগাঁথাকে দৃশ্যমান করে তোলে। ভাবনারা ছুঁয়ে যায় অনুভূতি...”
”A Picture is worth a thousand words." হাজার বছর আগে এক চীনা দার্শনিক বলেছিলেন কথাটি। আমি আজকে এই ২০১২ তে এসে বলবো ”A Picture is woeth a Thousand feelings!" অক্ষর থেকে আমাদের অনুভূতিতে আসার সময় এসেছে। প্রখ্যাত আলোকচিত্রী রঘু রায় বলেছেন ‘if you consider a picture as thousand words, the world will be a very noisy place to live in, with all the million images existing today" কথাটি কিন্তু সত্যি। এই যে আজকের ঢাকা, এতো কোলাহল। তার মাঝেও কিন্তু অনুভুতিরাই তীব্র। অনেক শব্দের চেয়েও কৌতুহলী কিশোরের দৃষ্টি, তরুণ কিংবা তরুণী চোখের উচ্ছাস, একটি ছোট্ট চায়ের দোকানে বসে থাকা বৃদ্ধের জবুথবু শরীর অনেক বেশি বাঙময়। আমার দুটি ছেলে- নাম মেঘদূত আর আকাশ। আমি আকাশে মেঘ খুজবার মতোই এই অনুভূতির ছবিগুলো হাতড়ে ফিরি। সাদাতের ‘গল্পছবি’র ছবিগুলোও এমন অনেক ভাষাকে অনুভূতির ছোঁয়ায় জাগরুক করে। ‘তপুর ডাহুক চোখে জমে ওঠা শিশির। আকাশমুখী থমকে যাওয়া সিঁড়ির মতো খালি পায়ের শিশুটিও যখন বিলবোর্ডে চেয়ে থমকে যায়, তখন ভাবনারা অনুভূতি ছোঁয়। কিংবা দুটি শিশু হেলিকপ্টার দেখবে বলে হেলিকপ্টারের মতোই প্রায় শুন্যে পা তুলে ইকারুসের ডানা মেলে ভেসে যায়। এখানে ছবি শুধু সত্যি কথাই বলে না, এগুলো অনুভূতিরই পিক্সেল। সাদাতের মতো একজন তরুণ আলোকচিত্রী সেখানে ছবির মাধ্যমে সত্যিকারের অনুভূতির উপলদ্ধিকে সঞ্চারিত করেছে, বাংলাদেশের হৃদয়কে আলোকিত করেছে। ’লর্ড অফ দ্যা রিংস’ কিংবা ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্টের’র মতো বই পৃষ্ঠায় অনেক বড় বলে আমি পড়ে উঠতে পারিনি। শুনতে ভালো না লাগলেও কথাটি সত্যি যে’আজকের পৃথিবী একপৃষ্ঠার পৃথিবী। সাদাতের প্রতিটি ছবির মাত্র আট দশ লাইনের একেকটি গল্প যেন ভেতরের অন্য কোন জীবনগাঁথাকে দৃশ্যমান করে তোলে, ছুঁয়ে যায় এবং সেখানে শব্দগুলোও শেষ পর্যন্ত অনুভূতির কাব্য হয়ে ওঠে। ’ভিজে যায় কান্না’ ছবিটি দেখে আমি সেই অনুভূতির ভিজে যাওয়া টের পাই। আপ্লুত হই। একে অনুভূতিরই বন্যা বলবো। আমার আশা, পিক্সেল-ভেজা সাদাতের ক্যামেরায় আগামী হয়ে দাঁড়াবে। শুভ কামনা, সাদাত।
তাঁর জন্ম ১৯৮৪ সালের ২১ মে, মাদারীপুর জেলার, কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামে।
তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। একটি পত্রিকায় ফটোসাংবাদিক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ২০১৩ সালে তার প্রথম বই 'গল্পছবি' প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে তিনি ছোটগল্প ও উপন্যাস এর মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিনের জন্য নিয়মিত ছোটগল্প লেখেন।সাদাত হোসাইন নিজেকে বলেন গল্পের মানুষ। তাঁর কাছে চারপাশের জীবন ও জগত, মন ও মানুষ সকলই গল্প। তিনি মনে করেন, সিনেমা থেকে পেইন্টিং, আলোকচিত্র থেকে ভাস্কর্য, গান থেকে কবিতা- উপন্যাস-নাটক, সৃজনশীল এই প্রতিটি মাধ্যমই মূলত গল্প বলে। গল্প বলার সেই আগ্রহ থেকেই একের পর এক লিখেছেন- আরশিনগর, অন্দরমহল, মানবজনম, নিঃসঙ্গ নক্ষত্র, নির্বাসন, ছদ্মবেশ, মেঘেদের দিন ও অর্ধবৃত্তের মতো তুমুল জনপ্রিয় উপন্যাস। ‘কাজল চোখের মেয়ে’, তোমাকে দেখার অসুখ'সহ দারুণ সব পাঠকপ্রিয় কবিতার বই। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বোধ, দ্য শুজ, প্রযত্নের পাশাপাশি' নির্মাণ করেছেন 'গহীনের গান' এর মতো ব্যতিক্রমধর্মী পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও। জিতেছেন জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকার পুরস্কার, এসবিএসপি-আরপি ফাউন্ডেশন সাহিত্য পুরস্কার, পশ্চমিবঙ্গের চোখ সাহত্যি পুরস্কার, শুভজন সাহিত্য সম্মাননা ও এক্সিম ব্যাংক- অন্যদিন হুমায়ূন আহমদে সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯।
সাদাত হোসাইন এর বই
সত্যটা মিথ্যা, তোমাকে দেখার অসুখ, মেঘেদের দিন, নির্বাসন, ছদ্মবেশ, শঙ্খচূড়, অর্ধবৃত্ত, কাজল চোখের মেয়ে।