ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ এই বইটির মুখবন্ধে আবদুল গাফফার চৌধুরী উল্লিখিত ‘বাঙালির বিলাত বিজয়’ গল্পটি রচিত হয়েছিল লেখকের জীবনের একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে প্রায় দু-দশক আগে। ফজলুল আলমের প্রথম গল্প সংকলন শূন্যতা ছুঁয়ে ফেরায় (২০০৫) সেটা সংগৃহীত আছে। বাস্তব ঘটনা নিয়ে লিখলেও সেই গল্পে অবাস্তবতাও ভিড় করেছিল। সেই অবাস্তবতার রেশ কখনও লেখককে ছেড়ে যায় নি, বরং বৃদ্ধি পেয়ে নতুন ও অধুনা রচিত গল্পগুলোতে আরও গভীরতা এনে দিয়েছে।
ফ্রয়েড ও প্রকৃতি সেই গভীরতার প্রকাশ- একজন পরিণত লেখকের দ্বিতীয় গল্পসংগ্রহ। পাঠক এখান থেকে এমন একটা জগতে পৌঁছে যাবেন সেখানে বাস্তব, অলীক ও পরাবাস্তব সব একাকার হয়ে আছে। পাঠক যা চান সে সবাই এখানে পাওয়া যায়, কাহিনী, মনোজগতে বিচরণ, পাঠককের ইচ্ছাপূর্তি এবং গল্পশেষে ভাবনার খোরাক। ফজলুল আলমের নতুন গল্প-উপন্যাসের বিষয় ও শৈলী কখনও একস্থানে থেমে থাকেনি। সমাজ-দর্শন ও তাত্ত্বিক জ্ঞান তাঁর সব গল্পই পাঠককে নিজের সত্যিকার অবস্থান সম্পর্কে করে তোলে সচেতন।
গত বছর তাঁর উপন্যাস ক্রান্তিকালের প্রতারক (২০০৪) লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজ-এর পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তিনি প্রবন্ধ, গেবেষণামূলক ও শিক্ষায়তনিক বই লিখছেন বহু দিন ধরে। তাঁর গবেষণামূলক বই ইংল্যান্ডেও প্রকাশিত হয়েছে।
ফজলুল আলম পেশায় গ্রন্থাগার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হলেও ‘সংস্কৃতি’ বিষয়টি ও সাহিত্যচর্চা তাঁর নেশা। সংস্কৃতি নিয়ে পর পর তিনটি ব্যাতিক্রমী গ্রন্থের ধারাবাহিকতায় এই গ্রন্থের প্রতিপাদ্য বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্ন--সংস্কৃতির নতুন রূপরেখা কীভাবে সমকালীন বিশ্বে প্রতিক্রিয়াশীলদের কৌশলগত তত্ত্বের স্বরূপ উন্মোচিত করতে পারে। তিনি বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বখ্যাত সেন্টার ফর কনটেম্পোরারি কালচারাল স্টাডিজ থেকে ডক্টরেট করে 1996 সনে দেশে ফিরে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক পদে। তাঁর একটি উপন্যাস ক্রান্তিকালে প্রতারক 2006 সন থেকে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজে (সোয়াস) পড়ানো হচ্ছে। টেলিভিশনে তাঁরই পরিকল্পিত ‘কড়া আলাপে’ তাঁর মননশীল আলোচনা অনেকেই দেখে থাকবেন। প্রবন্ধ, অনুবাদ, গল্প-সংগ্রহ, উপন্যাস, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য মিলে তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা বাইশ। সংস্কৃতির নব্যরূপরেখায় সমকাল ফজলুল আলমের সপ্তম প্রবন্ধগ্রন্থ ও সংস্কৃতি বিষয়ে চতুর্থ গ্রন্থ।