অন্ধকার রাতের ন্যায় একের পর এক ফিতনায় ছেয়ে যাচ্ছে আমাদের পৃথিবী। চোখ ধাঁধানো ফিতনার আক্রমণে আমরা হারিয়ে ফেলছি সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকরণ ক্ষমতা। কারা আল্লাহর বন্ধু আর কারা শয়তানের বন্ধু, তা চিহ্নিত করতে গিয়ে ধোঁকায় পতিত হচ্ছি আমরা। আমরা আজ শয়তানের দোসরদের আল্লাহর বন্ধু ভেবে বসি, আর আল্লাহর বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হই।
আজ থেকে শত শত বছর পূর্বে মহান ইমাম শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যা (রহ.) এই ফিতনার মোকাবিলায় একটি কালজয়ী গ্রন্থ রচনা করে গিয়েছেন। ‘আল-ফুরকান বাইনা আউলিয়া-উর-রহমান ওয়া আউলিয়া-উশ-শাইত্বান’ নামের সেই গ্রন্থে তিনি আলোচনা করেছেন কারা আল্লাহর বন্ধু আর কারা শয়তানের বন্ধু। ঠিক কোন কোন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হলে একজন ব্যক্তি আল্লাহর বন্ধু হয়ে ওঠে, আর কোন কোন বৈশিষ্ট্যের কারণে একজন ব্যক্তি শয়তানের বন্ধু হয়ে যায়, সেসবের বিস্তারিত আলোচনা করেছেন তিনি সেই গ্রন্থে। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি সেটিরই বাংলা অনুবাদ।
এই বইটি পড়ে আমরা আল্লাহর বন্ধু আর শয়তানের বন্ধু চিহ্নিত করার বেশ কিছু সূত্র জানতে পারব। ঘোর অমানিশার এই সময়ে বইটি আমাদের জন্য ‘ফুরকান’ হবে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা ইন শা আল্লাহ।
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রা.)
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. জন্ম ও বংশ পরিচয় ও ৬৬১ হিজরীর ১০ রবিউল আউয়াল সােমবার দামেস্কের নিকটবর্তী লেখক লেখক হাররান প্রদেশে তিনি জন্ম গ্রহণ এনায়েত করেন। তার পুরাে নাম তকিউদ্দীন আবুল আব্বাস আহমদ গলেখক চত। ইবনে আবদুল হালিম ইবনে আবদুস সালাম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মােহাম্মদ ইবনে তাইমিয়া আল হাররানী । তবে তিনি ইবনে তাইমিয়া নামে বেশী পরিচিত।
শিক্ষা জীবন : ইমাম ইবনে তাইমিয়ার পিতা আবদুল হালিম হাম্বলী মাযহারের একজন মশহুর আলেম ছিলেন। তিনি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ছিলেন। ইবনে তাইমিয়া ১৭-২০ বছর পর্যন্ত পিতার কাছে শিক্ষা লাভ করেন। পিতা পুত্রকে কুরআন, তাফসীর, হাদীস, আরবী ভাষা প্রভৃতি উত্তমরূপে শিক্ষা দেন। ইমাম ইবনে তাইমিয়া শামসুদ্দীন আবদুর রহমান আল-মাফদেসীর কাছেও আইন শাস্ত্র পড়েন। অসাধারণ মেধা, আশ্চর্য স্মৃতিশক্তি, সুক্ষ বিচারশক্তি ও সুদক্ষ তাকিকতার পারদর্শী হয়ে উঠেন এবং সুধী সমাজে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন।
প্রধান বিচারপতির পদ প্রত্যাখানঃ তাঁর বয়স যখন ৩০ বৎসর, তখনু তাঁর যশ বা খ্যাতির জন্য সরকার প্রধান তাঁকে লােভনীয় পদ দেশের প্রধান বিচারপতি পদে নিয়ােগ দিয়ে সরকারপন্থী করার জন্য প্রস্তাব পাঠান; কিন্তু তিনি তাঁকে না করে দিয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়ােজিত থাকেন।
রচনাবলী ও ইমাম ইবনে তাইমিয়া ছিলেন নিরলস জ্ঞানসাধক। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে পূর্ববর্তী সকল শ্রেণীর লেখকদের রচনাবলী পড়তেন, তাদের চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিত হতেন এবং অবিশ্রান্ত লেখনী চালনা করে। নিজের মতামত লিপিবদ্ধ করতেন। কথিত আছে যে, তিনি প্রায় পাঁচশত পুস্তক রচনা করেন। কিন্তু বর্তমানে ৬৪টির অসিস্ত মিলেছে। যা মুসলিম গ্রন্থ প্রণেতাদের মধ্যে অন্যতম। এটা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে প্রধান দুটি কারণে ১। চিরকুমার ২। জীবনের অধিকাংশ সময় কারাবরন। অনেকের মন্তব্য- জীবনের এক তৃতীয়াংশ তিনি কারাবরন করেন। ফলে নির্জনে ধ্যানমগ্ন এ সমস্ত লেখা সম্ভব হয়েছে।
মৃত্যবরণ ও কারাবরন অবস্থায় তাঁর যখন কাগজ-কলম ছিনিয়ে নেওয়া হল, তখন তিনি ব্যথিত হয়ে কয়লা দিয়ে। ২০ দিন দেওয়ালে লিখেন। এরপর অন্তিম ডাক আসে, সে দিনটি ছিল সােমবার মধ্যরাত ২০ যিলকদ, ৭২৮ হিজরী সন। তাঁর জানাযায় প্রায় দু'লক্ষ পুরুষ অংশ গ্রহণ করে। দামেস্কের সুফিয়া কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা। হয়। সে কবরস্থানের সবগুলাে কবর ভেঙ্গে সিরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনসমূহ নির্মিত হয়েছে; কিন্তু ইবনে। তাইমিয়ার কবরটি আজও বিদ্যমান রয়েছে।