ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা অঞ্চলের চিরায়ত লোক-ঐতিহ্যের অমূল্য সম্পদভাণ্ডার থেকে এ লোককাহিনীগুলো হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকৈ রক্ষা করে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে সুধীমহলের কাছে নিয়ে এসেছেন নরসিংদী জেলার কৃতী সন্তান বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, ইতিহাস, লোকসাহিত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় নিবেদিত বহুমূল্যবান গ্রন্থ প্রণেতা বাংলা একাডেমীর সম্মানসূচক ফেলোশিপপ্রাপ্ত মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান। যেমননি করেছিলেন ‘মৈময়নসিংহ গীতিকা’ সংগ্রহ করে চন্দ্র কুমার দে। ‘বাংলাদেশে লোক কাহিনী’ ২য় খণ্ড বইটির কাহিনীগুলি তিনি সংগ্রহ করেন ১৯৯১ সালের দিকে। নেত্রকোনা জেলার এক নিরক্ষর দিনমজুর মোমরুজ আলী এসব কাহিনীর কথক। নিরক্ষর হলেও মোমরুজ আলীর স্মরণশক্তি ও মেধা অত্যন্ত প্রখর। এ বইটির কাহিনীগুলো নেত্রকোনা অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় হলেও অত্যন্ত আনন্দদায়ক ও শ্রুতিমধুর। সব বয়সের পাঠকই এ গল্পগুলো পাঠে নির্মল আনন্দ ও শিক্ষালাভ করতে পারেন। এ বইয়ের ৫টি লোকগল্পের নামগুলো যেমন সুন্দর তেমনি বৈচিত্র্যময় (বেভুল ছিপাই, তুলাল বাশ্শা ও তোলাপজান কইন্যা, টেডন ও পরধান্যার কিস্সা, মতিলাল বাশশা, অকুল বকুল) প্রকাশের অল্পদিনের মধ্যেই এ কপি শেষ হয়ে যায় বলেই দ্বিতীয় মুদ্রণের এ প্রচেষ্টা। অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি যেমন এ বইটির প্রশংসা করেছেন তেমনি অতি সাধারণ স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীও বইটি আপন করে নেয়। সব শ্রেণীর পাঠকের কাছে বইটি আনন্দদায়ক ও আকর্ষণীয়। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বপ্রান্তে গারো, খাশিয়া ও জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে- কংশ, সোমেশ্বরী, মগরা, নানিয়া, তলার, ধারাই নদীবিধৌত খালিয়াজুরী, চিনাগুড়ি, চিতলী, বাঘড়া ইত্যাদি হাওড়-পরিবেষ্টিত লোকজন ঐতিহ্যের লীলাভূমি নেত্রকোনা জেলা থেকে সংগ্রহ করা হলেও এগুলো সারা বাংলার অমূল্য সম্পদ। এ কাহিনীগুলো চিরকাল মানুষকে আবহমান বাংলার শেকড়ের সন্ধান দেবে। বইটির সংগ্রাহক হাবিবুল্লা পাঠানকে এরকম মহৎ ও কঠিন কাজের জন্য ধন্যবাদ জানাই।
জন্ম: ৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৩৯। নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার বটেশ্বর গ্রাম। পিতা: মােহাম্মদ হানীফ পাঠান। মাতা: মেহেরুন্নেছা । স্ত্রী: সেলিনা বেগম। তিন কন্যা: ... পিতা মােহাম্মদ হানীফ পাঠান ছিলেন একাধারে প্রখ্যাত লােকসাহিত্য সংগ্রাহক, গবেষক, প্রত্নতত্ত্ববিদ, মূল্যবান প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রাহক, শিক্ষাবিদ, গণিতবিদ, ভাষাসৈনিক, বৃটিশ ও জমিদার বিরােধী আন্দোলনকারী, সুবক্তা ও একজন সফল কৃষক। পিতার প্রায় সব গুণই সুযােগ্য পুত্র হাবিবুল্লা পাঠান এর মধ্যেও বিরাজমান। বিশেষত লােকসাহিত্য ও প্রত্নতত্ত্বে পিতাকেও যেন ছাড়িয়ে গেছেন পুত্র। তার অক্লান্ত ও বিরামহীন প্রচেষ্টায়। ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে ওয়ারী ও বটেশ্বর গ্রাম দুটি আজ সারা বাংলাদেশে, এমনকি সারা বিশ্বে পরিচিত। ওয়ারী-বটেশ্বর আজ ইতিহাসেরই অংশ। এখানে পাওয়া গেছে সাড়ে তিন হাজার বছরের প্রাচীন...বসতি পাওয়া গেছে মূল্যবান নকশি পাথরের গুটিকা। এসবই তাঁর গবেষণালব্ধ কর্ম। সম্পূর্ণ নিজ খরচে বটেশ্বর গ্রামে নিজবাড়িতে গড়ে তুলেছে, বটেশ্বর জাদুঘর’ বা প্রত্বসংগ্রহশালা। লােক সাহিত্যের নানা উপাদান ও উপকরণ সংগ্রহে হাবিবুল্লাহ পাঠানের রয়েছে অসাধারণ সাফল্য। একটি বইয়ের তথ্য ও উপাদান সংগ্রহ করেছেন একটানা ৩৫ বছর। বেরিয়েছে ৩টি খণ্ডে লােককাহিনী। বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন আকাশবাণীসহ বাংলাদেশের সব সরকারী-বেসরকারী বেতারটেলিভিশন ও সংবাদপত্রে তাঁর জীবন ও কর্মবিষয়ক বহু সাক্ষাৎকার ও ফিচার প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। হাবিবুল্লা পাঠানের প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ: নরসিংদীর কবি সাহিত্যিক (১৯৮৬), নরসিংদীর লৌকিক খেলাধুলা (১৯৮৮) বাংলা একাডেমী প্রকাশিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ওয়ারী বটেশ্বর (১৯৮৯), বাংলাদেশের লােককাহিনী (১ম খণ্ড নরসিংদী- ১৯৯৬) , বাংলাদেশের লােককাহিনী (২য় খও নেত্রকোনা- ১৯৯৭), বাংলাদেশের লােককাহিনী (৩য় খণ্ড বি. বাড়িয়া- ১৯৯৮), নরসিংদী গাজীপুরের লােকঐতিহ্য : বিবাহ ও মেয়েলী ছড়াগীত (২০০০)