ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম বিশ শতকের প্রথম দিকে যাপন করেছেন তাঁর ছেলেবেলা। গোটা তিরিশের দশক তাঁর হাতেখড়ি থেকে স্কুল পর্যায়ের অধ্যায়ন। ব্রিটিশ শাসিত অবিভক্ত ভারতবর্ষে তাঁর পিতা ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার। পুলিশ পিতার সন্তান মুস্তাফা নূরউল ইসলামকে পিতার বদলিসূত্রে ভারত-বাংলার বিভিন্ন জনপদে ঘুরতে হয়েছে। স্কুলের দশটি শ্রেণীর দেয়াল অতিক্রম করতে ঘুরতে হয়েছে অন্তত আট-দশটি বিদ্যালয়। ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে তিনি ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছেন ‘নিবেদন ইতি’ নামের গ্রন্থে তাঁর দীর্ঘ জীবনের অজস্র ঘটনা। ‘ফিরে দেখা ছেলেবেলা’ সেই স্মৃতি ঝাঁপিরই ছেলেবেলা তথা স্কুল সার্টিফিকেট বা এন্ট্রান্স পাস করা অব্দি ঘটনাপ্রবাহের নির্বাচিত অংশ ধরা হয়েছে।
ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ হলেও আজ থেকে প্রায় ৭৫ বছর আগের একটি শিশুর জীবন যাপনের সঙ্গে মিশে আছে ধূসর হয়ে আসা সেই কালের অসংখ্য ছবি, কত মানুষের মুখ, কত স্থান কাল পাত্র আর সমাজের খণ্ড খণ্ড ছবি। এই সময়ে বসে পাওয়া যাবে। ইতিহাস হয়ে যাওয়া অনেকের কথা। ছোটদের যেমন এ বই ভালো লাগবে, বড়দেরও ভাবনা জাগাবে।
প্রাককথন প্রাককথনে প্রসঙ্গত মনে আসে স্মৃতিচারণার সেই পূর্ব: ‘নিবেদন ইতি’ যেখঅনে প্রয়াস পাওয়া গিয়েছিল কালের ছবিসহ আত্মজৈবনিক দর্পণে নিজেকে দেখার। দুই খণ্ডে সেখানে প্রতিবিম্বিত হয়েছিল জন্মকাল: আঁতুরঘরের ঠায় ঠিকাকা থেকে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিডরও ওপারে- কর্মজীবনের নানা ক্ষেত্র। জীবন চলার বাঁকে বাঁকে কত যে দেখা, কত যে শোনা আর পিতা-মাতার শাসনে-স্নেহে সেই যে বেড়ে উঠার আশ্চর্য সময়, বিস্ময় আর মুগ্ধতায় অবাক চোখে কলকাতা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বগুড়াসহ বাংলাদেশকে দেখা, নিজেকে চিনে নেয়ার বয়েস, সেইসব কথাই ধরা আছে বিস্তারে স্মৃতিকথনে নিবেদন ইতিতে।
তথাপি এই ‘ফিরে দেকা ছেলেবেলা’র হেতুটা কী- জিজ্ঞাসা ত স্বাভাবিক। বগুড়ার আঁতুরঘর থেকে পুলিশকর্তা পিতার চাকরিস্থল কলকাতায় হাতেখড়ি পর্যন্ত শিক।ষাজীবনের যে শুরু, তার রেশ টেনে পিতৃদেবের বদলির সুবাদে বাংলার কত পথ-প্রান্তর, শহর-নগর আর কত স্কুলেই না অভিজ্ঞতার নব নব বিচিত্র পাঠ! সে কথা আলাদ করে জানাতেই হবে নবীন প্রজন্মকে এমনতর দাবি নিয়ে পুত্রপ্রতিম স্নেহের কবি নাসির আহমেদ যখন সমকালের ঈদসংখ্যার জন্য ওই বিশেষ লেখা পেতে নাছোড়াবান্দা, তখন অগত্যা আর কী করা- ‘নিবেদন ইতি’ থেকে আলাদা করে টুকরো টুকরো বাছাইকথন ‘ফিরে দেকা ছেলেবেলা’। এই শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিকথন আবার ছোটোদের জন্য গ্রন্থকারে প্রকাশের দাবিও রয়েল পাবলিশর্সের হয়ে ওই নাসির আহমেদেরই। সেই দাবি মেটাতেই এই প্রয়াস।
ব্রিটিশ আমলেই কেটেছে শৈশব কৈশোর সেই যুগের নানা ছবি ছড়িয়ে আছে স্মৃতিকোষে। স্কুলের সহপাঠী, শিক্ষকমন্ডলী, সেকালের আদব-কায়দা, শাসন, রুচি এইসব মিলিয়ে এ-ত নিজের কথামাত্র নয়, সময়েরই ছবি। সেই সময় যা আর কখনো ফিরে আসবে না। সেই সময় যা ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের নিগড় থেকে মুক্তিসংগ্রামে ছটফট করা সময়। এ প্রজন্মের শিশু-কিশোর নবীনদের যদি সেই দিনের স্মৃতিকথন সামান্য আনন্দ দেয়- সময়কে বুঝতে দেয়- তাতেই আমি বেজায় খুশি।