সব বয়সী, সব পাঠকের প্রিয় গােয়েন্দা ফেলুদার রহস্য রােমান্স অ্যাডভেঞ্চার। গােয়েন্দা গল্প বাংলায় কম লেখা হয়নি, কিন্তু এমন টানটান, মেদবিহীন গল্প বিরল । ফেলুদার রহস্য কাহিনীর কোনওটাতেই আড়ষ্টতা নেই। নেই কোনও বাহুল্য। একটা বাড়তি শব্দও খুঁজে পাওয়া ভার। গল্পজুড়ে ছবির পর ছবি ফুটে ওঠে। ফেলুদার একটা পােশাকি নাম আছেপ্রদোষ মিত্র। কিন্তু ফেলু মিত্তির নামেই তাঁর সমস্ত খ্যাতি। রহস্যের জট খুলতে ফেলুদার জুড়ি নেই। তার সহকারি তােপসে নিজের জবানিতে যেসব গল্প লিখেছে তার মধ্যে ফেলুদা চরিত্রটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। স্ব-মহিমায়। গল্পের শুরুতে তিনি নিজেকে রহস্যের আড়ালে লুকিয়ে রাখলেও শেষ মুহুর্তে সাফল্যের শীর্ষ স্পর্শ করেন । সবসময়ই তিনি তদন্তের গলিখুঁজি কিংবা গােলকধাধা পেরিয়ে বিশ্বাসযােগ্যভাবে ফাস করে দেন যাবতীয় রহস্য-জাল। কোনও বাধাই ফেলুদার কাছে বড় নয়। গােয়েন্দা ফেলুদার এ্যাডভেঞ্চারে তৃতীয় যিনি অপরিহার্য, তিনি লালমােহন গাঙ্গুলী। 'জটায়ু' ছদ্মনামে তিনি অদ্ভুত সব রহস্য-উপন্যাস লেখেন। তােপূসের গল্পে বর্ণিত রহস্যের দুর্দান্ত ঘনঘটা ও মগজের ব্যায়ামের ফাকে ফাঁকে, অনাবিল হাসি ও সরসতার আশ্চার্য দরজাটা খুলে দেয় লালমােহনবাবুর অতি সরল সাবলীল উপস্থিতি। শুধুতাে গল্প নয়, ফেলুদার গল্প-উপন্যাসে যেসব যায়গায় রহস্য ঘনিয়েছে, সে দেশে কিংবা বিদেশে যেখানেই হােক, সেখানকার নিখুঁত ইতিহাস ও ভূগােলের বর্ণনা পাঠকদের চমকে দেয়। কোথাও এতটুকু ভুলচুক নেই। স্থান-কাল-পাত্র সম্পর্কে ফেলুদার জ্ঞান তাে গভীর বিস্ময় জাগায়! সব মিলিয়ে গােয়েন্দা ফেলু মিত্তিরকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়ার সাধ্য কারাে নেই। ফেলুদা, তােপূসে আর লালমােহনবাবুকে নিয়ে লেখা সত্যজিৎ রায়ের প্রতিটি অ্যাডভেঞ্চার অভিযান অবশ্যই পড়তে হবে। না পড়লে ঠকতে হবে। এই পড়ার কাজটি যাতে আরাে সহজসাধ্য হয় তারজন্য পাঠকদের হাতে এবার দু’খন্ডে ফেলুদা সমগ্র ।
সত্যজিৎ রায়
সত্যজিৎ রায় (২ মে ১৯২১ – ২৩ এপ্রিল ১৯৯২) একজন প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সঙ্গীত পরিচালক ও লেখক। কলকাতার রায় পরিবারে জন্ম নেওয়া সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র কর্মজীবন বাণিজ্যিক চিত্রকর্ম থেকে শুরু হলেও ফরাসি ও ইতালীয় চলচ্চিত্রের প্রভাবের পর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হন। তার প্রথম চলচ্চিত্র, *পথের পাঁচালী* (১৯৫৫), ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে এবং এটি অপু ত্রয়ী হিসেবে পরিচিত। সত্যজিৎ রায় তার কর্মজীবনে ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন এবং তাকে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার লেখা কাল্পনিক চরিত্র ফেলুদা ও প্রোফেসর শঙ্কু অত্যন্ত জনপ্রিয়। তিনি একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার (অস্কার), ভারত রত্ন ও পদ্মভূষণসহ নানা মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার লাভ করেছেন। ২০০৪ সালে বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় ১৩ তম স্থান লাভ করেন। ১৯৯২ সালে হৃদযন্ত্রের জটিলতার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়।