ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ জহুর বখশের আলোচ্য ‘ইতিহাসে মুসলিম নারীরত্ন’ গ্রন্থে মধ্যযুগের ভারতীয় ইতিহাস ও জীবন থেকে চয়ন করে এমন বারো জন মুসলিম নারী চরিত্রের আখ্যান প্রস্তুত করা হয়েছে, যাঁরা মানব জীবনে উচ্চ আদর্শ ও জাতীয় গৌরব রক্ষার জন্য নিজেদের জীবন বিসর্জন দিতেও সংকোচ বোধ করেননি। এই মুসলিম নারীদের মধ্যে রাজিয়া বেগম, নূরজাহাঁ, চাঁদ সুলতানার মতো বহুল আলোচিত ঐতিহাসিক চরিত্রতো আছেনই; তেমনি সম্রাট শাহজাহাঁর দুই কন্যা জাহানআরা ও রওশন আরা, দারাশিকোর পত্নী নজীরুন্নীসা, আওরঙ্গজেবের কন্যা জেবুন্নিসা ও বাংলার নবাব সিরাজুদ্দৌলার পত্নী লুৎফুন্নিসার মতো নারীরাও তাঁদের সামাজিক ব্যাক্তিত্ব নিয়ে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছেন। এদের ছাড়াও গুলশান, রুপবতী বেগম ও বিদরের বেগমের ন্যায় সেই মুসলিম নারীরাও আমাদের জ্ঞান পরিধির আওতায় ভুক্ত; যাদের নাম ইতিহাসের মোটা মোটা কিতাবগুলোতে লিপিবদ্ধ হতে পারেনি; কিন্তু তারা বোধ স্মৃতির অনেক গভীরে চির স্থায়ীভাবে অঙ্কিত হয়ে আছেন।এই নারীদের আখ্যান প্রস্তুত করতে গিয়ে লেখক যেমন বৃত্তান্ত ও লোক মনোরঞ্জনকে প্রথম শর্ত বলে গ্রহণ করেছেন, সেখানেও তিনি এ কথা স্মরণ রেখেছেন যে, এ প্রসঙ্গে এ গ্রন্থের পাঠকদের যারা জাতীয় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ , তাদেরও কিছু ঋণ আছে। এজেন্য ঐতিহাসিক তথ্যাবলি থেকে তিনি কোনো কিছুই ত্যাগ করেনি। আবার তিনি অতীতের আলোকে বর্তমানের প্রতিও মনোযোগ নিবন্ধ করেছেন। সূচিপত্র *ভূমিকা *অধ্যাপক জহুর বখশ *গ্রন্থকারের নিবেদন *সুলতানা রাজিয়া বেগম *বিদরের বেগম *গুলশান *রুপবতী বেগম *চাঁদের কন্যা চাঁদ সুলতানা *নূরজাহাঁ *জাহানআরা *রওশনআরা *নজীরুন্নিসা *জেবুন্নিসা বেগম *লুৎফুন্নিসা বেগম গুলবদন বেগম *চোচক বেগম *মমতাজুন্নিসা বেগম *হামিদা বানু বেগম ভূমিকা প্রকাশিত হলো অধ্যাপক জহুর বখশ প্রনীত ‘মুসলিম মহিলারত্ন’ নামক গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ ‘ইতিহাসে মুসলিম নারীরত্ন’। মধ্য ও উত্তর-ভারতের , এককথায় গো-বলয়ের মুসলিম লেখকেরা মূলত উর্দূ ভাষায় সাহিত্য চর্চা করে থাকেন, কিন্তু অধ্যাপক জহুর বখশ একমাত্র ব্যতিক্রম যিনি তাঁর যুগে হিন্দি ভাষায় সাহিত্য চর্চা করে গেছেন। মধ্য ও আধুনিক যুগের হিন্দি সাহিত্যের ইতিহাসে এ ধরনের দৃষ্টান্ত একাধিক আছে। মধ্যযুগের কবি রসখান, মালিক মুহম্মদ জাইসী, কবীর, দাদু প্রমুখ কবি হিন্দি ভাষায় কাব্য-সাহিত্য চর্চা করে গেছেন। এ যুগের বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে অধ্যাপক জহুর বখশ অন্যতম, যিনি আধুনিক হিন্দি সাহিত্যের বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের অন্যতম। তিনি এককথায় ‘অধ্যাপক জহুর বখশ’নামে পরিচিত, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও সম্মানিত।তাঁর একানব্বই বছরের (১৮৯৯-১৯৯০) দীর্ঘ জীবনের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৭৫। এগুলোর মধ্যে গল্প, উপন্যাস,রম্য রচনা,অনুবাদ ইত্যাদি আছে। তাঁর ১৭৫ টি গ্রন্থের অন্যতম হলো ‘মুসলিম নারীরত্ন’ যা সম্ভবত হিন্দি সাহিত্যের এক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থরুপে বিশেষ মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। বাংলা সাহিত্যে এ ধরনের গ্রন্থ এতদিন কল্পনাও করা যায়নি।গ্রন্থটি হাতে আসা মাত্রই এ বঙ্গানুবাদ করে বাংলা সাহিত্যে এর অভাব মোচনের প্রয়াস চালালাম। অদ্ভুদ ব্যাপার এই যে , আমি কিছু কাল যাবৎ এ ধরনের একখানি বই লেখার পরিকল্পনা করছিলাম, অনেক তথ্যও সংগ্রহ করেছিলাম, কিন্তু একটি দ্বন্দ্বে পড়েছিলাম, আমার নির্বাচিত ‘ মুসলিম নারীরত্ন’ রা কোন পর্যায়ে হবেন। তাঁদের যুগ কালেরই বা সীমারেখা কী হবে? তারপর ২০০২ সালের কলকাতা গ্রন্থমেলায় ঘুরতে ঘুরতে এই বইটি পেয়ে গেলাম এবং আমার জিজ্ঞাসার জবাব পেয়ে গেলাম। তাতে দেখলাম মহিলা রত্নগন সবা শহী-ঘরানার রাজনৈতিক পরিমন্ডলের সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের মানুষ। যদিও এদেঁর অনেকেই এসেছেন অরাজনৈতিক ও শাহী -ঘরনার বাইরে থেকে কিন্তু এঁরা উচ্চতর রাজনৈতিক পরিবেশ -পর্যায়ের সাথে দারুনভাবে মিশে গিয়েছেন। বইটি পড়তে পড়তে ও অনুবাদ করতে করতে এর লেখক অধ্যাপক জহুরা বখশকে কতবার সালাম ও সাধ্যবাদ দিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। তবে তিনি ইহ জগতে থাকলে, দিল্লি থাকুন, ভূপাল থাকুন, বা আগ্রা -লখনৌ থাকুন, আমি সরাসরি গিয়ে তাঁকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে আসতাম। আল্লাহ তাঁর আত্নার শান্তি দিন।