ফ্ল্যাপে লেখা কথা আধুনিকতা বা মডার্নিজমের মতাে। উত্তর-আধুনিকতাও একটি দৃষ্টিভঙ্গি।। আধুনিকতার ধারণার অভিঘাতেই তার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে জন্ম নিয়েছে। উত্তর-আধুনিকতা বা পােস্ট মডার্নিজম। উত্তর-আধুনিকতাকে বােঝার জন্য আমাদেরকে প্রথমেই আধুনিকতাকে বুঝতে হবে। কেননা, এর মধ্য থেকেই উত্তর-আধুনিকতার যাত্রা শুরু হয়েছিল। আধুনিকতার জন্ম আবার পুঁজিবাদ বা ক্যাপিটালিজমের মনােগাঠনিক চিন্তা হিসেবে । এই আধুনিকতাকে বােঝা ছাড়া বিংশ শতাব্দীর জটিল চিন্তা-কাঠামাে বােঝা রীতিমতাে অসম্ভব। পােস্ট মডার্নিস্ট চিন্তা ঠিক কীভাবে আধুনিকতার ক্রিটিক করে সেটা জানাও জরুরি। এনলাইটেনমেন্ট থেকে পােস্ট মডার্নিজম: চিন্তার অভিযাত্রা বইতে খুব সহজ করে আধুনিকতা আর উত্তর-আধুনিকতাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ভূমিকা দর্শন বা চিন্তার আলােচনায় কেউ আগ্রহী হয় না কেন। এটা আমার অনেক দিনেরই জিজ্ঞাস্য ছিল। আমার যেটা ধারণা তা হচ্ছে, চিন্তার ইতিহাসের যে ব্যাপ্তি সেটা নিয়ে কম্প্রিহেনসিভভাবে বলতে বা লিখতে পারার মানুষ খুব কম আছে। দর্শনের আলােচনা এমন জটিল আর দুর্বোধ্যভাবে বিজ্ঞজনেরা করে থাকেন যে, সেটায় আগ্রহ ধরে রাখা কারাে জন্যই সম্ভব নয়। বাংলাদেশে প্রকাশিত কিছু দর্শনের বই আমি পড়ে দেখার চেষ্টা করেছি। আক্ষরিক অর্থেই বুঝতে পারিনি লেখক কী বলতে চাচ্ছেন। অথচ এই চিন্তার ইতিহাস অত্যন্ত আনন্দদায়ক পাঠ হতে পারে যদি সেভাবে লেখা যায়। আমার কিছু বইয়ে পিতা-পুত্রের বৈঠকি আলাপের ঢঙে বেশ জটিল বিষয় নিয়েও বই লিখেছি। যেমন: ভারতীয় দর্শনের মজার পাঠ। পাঠক বইটা আগ্রহ নিয়েই পড়েছে।
এই বইটা সেই লক্ষ্য নিয়েই লেখা। আমাদের আধুনিকতার কালপর্বটা নিয়ে পরিচ্ছন্ন ধারণা থাকাটা রাজনৈতিক কারণেই খুব জরুরি। নইলে আমরা ভুল করে শত্রুদের কাতারে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের বিরুদ্ধে কৃপাণ তুলে ফেলতে পারি। এই ভুল বাংলাদেশের রাজনীতিতে বারবারই হয়েছে।
চিন্তার ইতিহাস নিয়ে যারা গভীরভাবে জানতে চান, এই বইটা তাদের জন্য নয়। এই বইটা গভীর একাডেমিক ইন্টারেস্ট নিয়ে পড়তে গেলে হতাশ হতে পারেন। তবে চিন্তার ইতিহাস জানার জন্য আগ্রহ আছে; বিষয়টা নিয়ে আরাে পড়তে বা জানতে চান তাদের জন্য বইটির পাঠ উপভােগ্য হবে এতে কোনাে সন্দেহ নেই। বইটা আমার এমন এক ব্যক্তিগত সময়ে লেখা হয়েছে যখন আমি আত্মগােপনে, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছি। মুক্ত পরিবেশে, নিজের পরিচিত পরিমণ্ডলে বসে লেখা আর এমন একটা অনিশ্চিত উত্তেজনাকর সময়ে বসে লেখা দুটোই ভিন্ন অভিজ্ঞতা।
আপনার আনন্দময় পাঠ কামনা করছি।
-পিনাকী ভট্টাচার্য
পিনাকী ভট্টাচার্য
'৯০-এর ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মাঠ থেকে উঠে আসা যে কয়জন রাজনৈতিক কর্মী সমসাময়িক বাংলাদেশে আলােচিত লেখক হয়েছেন, পিনাকী ভট্টাচার্য তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সােভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে দিশা খুঁজে ফেরা পিনাকীর রয়েছে বিচিত্র সব রাজনৈতিক চিন্তা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার অভিজ্ঞতা। লেখালেখির বিষয় বহুবর্ণ ও বিচিত্র। দর্শন, ইতিহাস আর রাজনীতি পিনাকীর লেখালেখির প্রিয় বিষয়। সফল কর্পোরেট চিফ এক্সিকিউটিভ থেকে এখন লেখালেখি ছাড়াও নিজের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কাজে সময় দেন। একাদেমিয়া নামের একটি নিয়মিত পাঠচক্রের সভাপতি। বাংলাদেশের ফেইসবুকের লেখালেখির জগতে পিনাকী ভট্টাচার্য ইতিমধ্যেই নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। প্রশ্ন তুলতে ভালােবাসেন তিনি। নানা বিষয়ে বিস্ফোরক প্রশ্ন তুলে অনেক প্রচলিত বয়ানকে নড়বড়ে করে দেয়ার মতাে বিস্ময়কর দক্ষতা আছে পিনাকীর।
Title :
এনলাইটেনমেন্ট থেকে পোস্ট মডার্নিজম: চিন্তার অভিযাত্রা (হার্ডকভার)