ভ্রমণ কাহিনী। যা কি না যুগ যুগ ধরে লেখা হচ্ছে। অবশ্য এখন তা অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েও গেছে। তারপরও ভালো ভ্রমণ কাহিনীর বেশ অভাব রয়েছে। কারণ, আজকাল শুধু ভ্রমণ কাহিনী লিখলেই যে চলবে তা নয়। এসব কাহিনীর সাথে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা। আর তা হচ্ছে, ভালো ভ্রমণ কাহিনী অবশ্যই তথ্য সমৃদ্ধ হতে হবে। এমন কি তথ্য-উপাত্তের নির্ভুলতায় কোন ঘাটতি থাকতে পারবে না। তবেই না ভ্রমণ কাহিনী গ্রহণযোগ্যতা পাবে। পাবে জনপ্রিয়তা এবং তার সাথে বিশ্বাসযোগ্যতা। অবশ্য বিষয়টি কিন্তু এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। এক সময় ভ্রমণ কাহিনী ছিল নিতান্তই বর্ণনামূলক। লেখক তার বর্ণনায় যতটা মুনশিয়ানা দেখাতে পারতেন ততটা পাঠক প্রিয়তা লাভ করতেন। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর মুজতবা আলীর মত ভ্রমণ লেখকরা একটু এগিয়ে গিয়ে এসব বর্ণনায় সমাজ ও সংস্কৃতিকে টেনে নিয়ে এসেছেন। তার সাথে রেখেছেন রসবোধ আর তথ্য বিন্যাসের মত বিষয়গুলো। যেজন্য তাদের লেখা যেমনি ছিল সকল পাঠকের জন্য তেমনি ছিল উচ্চাঙ্গের কিছু পাঠকের জন্যও। তাইতো তাদের লেখার আবেদন আজো ফুরিয়ে যায় নি আর কোনো দিন ফুরাবে বলেও মনে হয় না। মোদ্দা কথা, আজকালকার পাঠকরা শুধু বর্ণনায় তুষ্ট নন, তাদের আরো চাই। তারা এখন শুধু ভ্রমণ নয় পর্যটন নিয়েও ভাবেন। সময় সুযোগে ভ্রমণে গিয়ে নানা কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। যা কি না পর্যটন কর্মকাণ্ড হিসেবে গন্য হয়। কেন না ভ্রমণ বিষয়ক যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে এক কথায় বলা হয় পর্যটন বা ট্যুরিজম। আর যিনি এই কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন তিনি হচ্ছেন পর্যটক বা ট্যুরিস্ট। আর এই ট্যুরিস্টরা তাদের ভ্রমণ বিষয়ক যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে স্বার্থক রূপ দেয়ার জন্য তথ্যের উপর নির্ভর করে থাকেন। তাই যে ভ্রমণ কাহিনীটি যতবেশি তথ্য সমৃদ্ধ সেটি ততবেশি পাঠক প্রিয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে বলা যায় ‘আমিরাতের পথে-ঘাটে’ বইটি উতরে গেছে। অর্থাৎ পক্ষপাততুষ্টতা ব্যতিরেকেই এর লেখক লুৎফুর রহমান ও কামরুল হাসান জনি-কে বাহবা দেয়া যাচ্ছে। জানি না তারা পর্যটন বিষয়ে কতটা জ্ঞান লাভ করেছেন। তবে তাদের লেখার মধ্যে পর্যটনের সুস্পষ্ট ছাপ রয়েছে। যা একজন সাধারণ পাঠক থেকে শুরু করে দক্ষ ও পরিপক্ক পর্যটককেও তার খোরাক যোগাবে এতে সন্দেহ নেই। কারণ, আজকালকার ভ্রমণকারী তথা পর্যটকরা কোনো গন্তব্যে শুধু বেড়ানো নয় ঐ গন্তব্যের বিভিন্ন পর্যটক আকর্ষণ সম্পর্কে আরো বেশি জানা এবং বিভিন্ন ধরনের সেবা গ্রহণের মাধ্যমে এক ধরনের সন্তুষ্টি লাভ করে বাড়ি ফেরেন। আবার এই সন্তষ্টি পর্যটকরা তাদের স্বজনদের সাথে ভাগাভাগি করার পাশাপাশি সম্ভব হলে লেখনীর মাধ্যমে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মধ্যেও ছড়িয়ে দেন। এ কাজটি করার ক্ষেত্রে লেখকদ্বয় অনেকটা স্বার্থক হবেন বলেই আমার বিশ্বাস। কেন না যে সাতটি আমিরাতকে নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত তার উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন গন্তব্য এবং এগুলোর পর্যটক আকর্ষণগুলোকে শুধু স্পর্শ নয় উপরন্তু বেশ ভালোভাবে তারা ফুটিয়ে তুলেছেন। এক্ষেত্রে পর্যটন শিল্পের বেশ কিছু পণ্য যেমন ধর্মীয় পর্যটন, ইসলামী পর্যটন, হালাল পর্যটন, অবকাশ পর্যটন, ঐতিহ্য পর্যটন, সাংস্কৃতিক পর্যটন, প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটন, বিনোদন পর্যটন, পরিবেশ পর্যটন, জনগোষ্ঠী পর্যটন ইত্যাদিকে আকর্ষণীয়ভাবে তাদের বর্ণনায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। আর এখানেই এই ভ্রমণ কাহিনীগুলোর সফলতা প্রমানিত। এতেকরে যারা সংযুক্ত আরব আমিরাত তথা দুবাই, আবুধাবী, শারজাহ, আল-আইন, আজমান, ফুজিরাহ ইত্যাদি বিখ্যাত পর্যটক গন্তব্য সম্পর্কে জানতে চান অথবা পরিদর্শনের ইচ্ছা পোষণ করেন তাদের জন্য ভ্রমণ কাহিনী ভিত্তিক এই বইটি অবশ্যই সাহায্যে আসবে। কেনো না এর মধ্যে শুধু আমিরাতের মাটি ও মানুষ এবং তাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ইতিহাসই নয় তার সাথে এখানে বসবাসকারী বিদেশি হিসেবে বাংলাদেশিদের জীবনাচার নিয়েও রয়েছে সাদামাটা আলোচনা। যা কি না সব ধরনের ও মেজাজের পাঠককে আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে ঔষধের মত কাজ করে থাকে। আর এজন্যই আমি আশা করবো এই ভ্রমণ কাহিনীগুলো সবার জন্য সুখপাঠ্য ও চিত্তাকর্ষক হবে। পরিশেষে, আগাম ধন্যবাদও থাকলো বইটির সুপ্রিয় পাঠকদের জন্য।