একটা প্রশ্ন বটে, ‘এলোকেশী কে?’ আমদের চেনা-জানা নগর ও নিসর্গ-পরিবেষ্টিত জীবন-পরিপার্শ্বেরই একটি চরিত্র, নাকি কবিমনের খুব গভীরে সৃষ্টি হওয়া বিচূর্ণিত ও বিচিত্র অনুভূতির মানবিক ও নান্দনিক আয়োজন? কখনো মনে হয় কবিসত্তার সঙ্গে অঙ্গীকৃত এক আলোড়ন, কখনো মনে হয়, না, তা তো নয়, নক্ষত্রের মতো দূরবর্তী ও, যার আলো এসে আছড়ে পড়ে আমাদের নীলাভ এই পৃথিবীতে, তা যদি না-ও হয়, অন্তত কবিচিত্তে। মর্তমানবী হয়েও এলোকেশী নক্ষত্র-মানবী, কিংবা নক্ষত্র-মানবী হয়েও ও এই পৃথিবীর প্রাত্যহিকতায় আত্তীকৃত। তাই চেনা-জানার মধ্যেও ফাঁক থেকে যায়, না-চেনা-জানার মধ্যেও সত্যতা থাকে না। এলোকেশী হয়ে ওঠে মাধুর্যময় রহস্য। কখনোবা বেদনা-সঞ্চারী যুগসত্তা। ছোট ছোট এ কবিতা স্বতন্ত্রভাবে আমাদেও চিত্তকে আপ্লুত করে, আর তাদের সমবায় আমাদের সম্মোহিত ও সমাচ্ছন্ন করে রাখে। খালেদ হোসাইনের ‘এলোকেশী’ প্রেমের কবিতাই। কিন্তু কেবল প্রেমের কবিতাই নয়। কারণ চিরন্তন মানবিক আবেগের ফাঁক ফোকর গলিয়ে এখানে উঁকি দেয় সমকালীন জীবনের করাল বাস্তবতা। কবি লিখেছেন, ‘অনেকেই জানতে চায় এলোকেশী কে? আমিও জানতে চাই এলোকেশীকে।’ কবির জানা যেখানে অনিঃশেষ, কাব্য-পাঠকের যাত্রা সেখান থেকেই শুরু হোক। এ যাত্রা জীবনমুখি, সুতরাং আনন্দময় হয়ে উঠবেÑএ কথা বলাই যায়।
খালেদ হোসাইন
খালেদ হােসাইন। জন্ম: ১৯৬৪। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। মা: সুফিয়া খাতুন। বাবা: গােলজার
হােসাইন।
ছেলেবেলায় বড়বােনের হাত ধরে বেড়াতে যেতেন। পরীদের বাড়ি। আকাশে পুঞ্জীভূত মেঘের সাদায় রবীন্দ্রনাথকে দেখে বিহ্বল হয়ে পড়তেন, কৈশােরেই। বুকে বেদনার বীজ বুনে দিয়েছিলেন জীবনানন্দ দাশ। মা কবিতা লিখতেন, আর স্বপ্ন দেখতেন। একটা স্বপ্ন ছিল, এই ছেলে কবি হবে। খালেদ হেসাইনের কবিতার জগতটি ক্রমাগত রহস্যময় হয়ে উঠছে। তিন দশক পরিব্যাপ্ত কাব্যসাধনার ফসল। ইলা মিত্র ও অন্যান্য কবিতা' (২০০০), ‘শিকারযাত্রার আয়ােজন' (২০০৫) ও জলছবির ক্যানভাস (২০০৬)। পাতাদের সংসার (২০০৭), এক দুপুরের। ঢেউ (২০০৮)। সংখ্যা খুব বেশি নয়, তবে বৈচিত্রভাস্বর। ব্যক্তিগত রােমান্টিকতা প্রসারিত হয়ে স্বদেশ-স্বকাল ছাপিয়ে সর্বজনীন ও সার্বভৌম হয়ে উঠছে। কবিতার অন্তর্গত শিরা-উপশিরার রক্তবদলই কেবল নয়, প্রাকরণিক নানা নিরীক্ষায়ও তিনি কবিতাকে স্বতন্ত্র করে তুলেছেন। খালেদ হােসাইনের কবিতাকে চেনা যায়। লেখকের ধাতটা আলাদা, কবিতার জাতটাও আলাদা। ভালােবেসে বিয়ে করেছেন আইরীন পারভীনকে, যিনি একটি কলেজে শিক্ষক। মেয়ের নাম রােদেলা। সুকৃতি, ছেলে অভীতি রৌদ্র। খালেদ হােসাইনের নেশা ভ্রমণ, স্বভাবে ঘরকুনে। পেশায় তিনি বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।