আলেকজান্ডার পোপ বলেন: ‘ইলিয়াড এক বন্য বেহেশত্। আমরা যদি এর সম্পূর্ণ সৌন্দর্যকে কোনো সাজানো বাগান দেখার মতো করে আলাদা আলাদাভাবে দেখতে ব্যর্থ হই, তবে তা কেবল এ-কারণেই যে ইলিয়াড-এর সৌন্দর্যগুলির মোট সংখ্যা অগণনীয় রকমের বেশি।’ ইলিয়াড এক রহস্যে-মোড়া ধাঁধা, আজও এর বাস প্রহেলিকায়। খ্রিষ্টপূর্ব আনুমানিক ৭০০ বা ৮০০ শতকে সম্ভবত হোমার নামের এক গ্রিক চারণকবি আনুমানিক তারও চার-পাঁচশ বছর আগে সংঘটিত কাল্পনিক বা ঐতিহাসিক এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের এই গাথাটি প্যাপিরাসে লিখে নেওয়ার জন্য বয়ান করেন অনুলেখকদের কাছে। আর এর মধ্য দিয়েই যাত্রা শুরু হয় পশ্চিমা সাহিত্যের। ইলিয়াড-এর সুবিশাল প্রভাব থেকে আজও মুক্ত নন আমাদের লেখক, কবি, নাট্যকার, স্থাপত্যবিদ ও চলচ্চিত্রের কাহিনী নির্মাতারা। হতে পারে ইলিয়াড তিন হাজার বছর আগের গ্রিক অন্ধকার যুগপর্বের এক কাহিনী। কিন্তু ইলিয়াড-এর মানুষেরা যেসব সমস্যা ও সংকটের মুখোমুখি হয়, তা হুবহু মিলে যায় আমাদের আধুনিক সমাজ ও সময়ের সঙ্গেও: ক্রোধ, কাপুরুষতা, কাম, প্রতিশোধস্পৃহা, বীরত্বের প্রতি মোহ এবং যুদ্ধ, যুদ্ধ আর যুদ্ধ। হোমার ঐশ্বরিক দেবদেবীদের বিশাল ও নির্দয় ক্যানভাসের সামনে দাঁড়িয়ে ইলিয়াড গেয়েছেন এক পরম মায়া ও মানবিকতা দিয়ে। দুর্দশা ও মৃত্যুর ছায়ার নীচে বাস করা তার মানুষদের জীবনের গল্পগুলি মানব-পৃথিবীর এক বিশ্বজনীন ট্র্যাজিক ছবি। এ অনুবাদে বিশ্বসাহিত্যের মহত্তম ট্র্যাজেডিগুলির মধ্যে প্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ এই সৃষ্টিটি ফুটে উঠেছে তার সমস্ত রঙ, রূপ, গন্ধ ও সুর ছড়িয়ে। বাঙালি পাঠকদের জন্য এখানে অনুবাদক উপহার দিচ্ছেন হোমারের পৃথিবীর খাদ্যখাবারের স্বাদ, তার আগুনের ধোঁয়ার গন্ধ, তার তীর-বর্শার ছুটে যাওয়ার শিসধ্বনি, তার মানুষদের ব্যথা-যন্ত্রণার আর্ত চিৎকার এবং তার কৌতুকের ঝলক—সবই মূলের প্রতি এক দুর্দান্ত বিশ্বস্ততায়।