সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি কোনোকিছুই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। তার মধ্যে নানা পরিবর্তন চলতেই থাকে। কিন্তু এই চলায় নানা মাত্রা থাকে, চলা ঠেকানোর বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির প্রবণতা যেমন থাকে আবার চলার মধ্যেও নানামুখ থাকে। এই ভিন্নভিন্ন মাত্রা ও প্রবণতা তৈরি হয় সমাজের ভেতরকার নানা স্বার্থ ও স্রোতের কারণে। শ্রেণি-লিঙ্গ-জাতি-ধর্ম-গোষ্ঠীর মধ্যেকার নিপীড়ন ও বৈষম্যভিত্তিক যে সমাজ তাতে ক্ষমতাবানদের দ্বারাই পরিবর্তনের কিংবা পরিবর্তন ঠেকানোর গতিমুখ নির্ধারিত হয় কিংবা সে চেষ্টাই জোরদার থাকে। কাজেই সংঘাতও থাকে চলমান। এই গ্রন্থভুক্ত প্রবন্ধগুলো দেশের কাছাকাছি সময়ের কয়েকজন সৃজনশীল মানুষকে কেন্দ্র করে, যারা বিদ্যমান আধিপতবাদী ব্যবস্থা, চিন্তা, দর্শন, সমাজ সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। নিজ নিজ বুঝ অনুযায়ী তাতে নিজস্ব ভ‚মিকা পালন করেছেন। এই গ্রন্থের প্রধান চরিত্র আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। একই সাথে তাঁর সময়ের, তাঁর অগ্রজ ও অনুজ (আখলাকুর রহমান, হুমায়ুন আজাদ, বদরুদ্দীন উমর, দীপংকর চক্রবর্তী, শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, শামসুর রাহমান, শওকত আলী, তসলিমা নাসরিন, সেলিম আল দীন, আরজ আলি মাতুব্বর, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মওলানা ভাসানী, আবদুশ শহীদ, অনীক, সত্য মৈত্র প্রমূখ) এমন আরও কয়েকজন মানুষের কাজ নিয়ে লিখেছি সমাজে যাদের কাজের পর্যালো চনা আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি। আমাদের সমাজ শুধু নয়, সব সমাজের অধিপতি শ্রেণি সবচাইতে সন্ত্রস্ত থাকে ভিন্নমতে, প্রশ্ন উত্থাপনে। তাদের প্রয়োজন চিন্তাহীন, প্রশ্নহীন, সৃষ্টিহীন, পরিবর্তনে অসার, বিশ্লেষণের ক্ষমতাহীন অনুগত জনগোষ্ঠী। আর মানুষের সমাজ দেখতে চাইলে আমাদের প্রয়োজন অন্ধভক্তি, প্রশ্নহীন আনুগত্য আর ঘৃণ্য আত্মসমর্পণের সংস্কৃতিকে পরাজিত করা; পরিবর্তনে সৃজনশীলতা আর মানুষকে জয়ী অবস্থানে নিয়ে যাওয়াই এই গ্রন্থের মূল বিষয়।