ছোট্ট নুসাইবা ঘরে বসে পড়ছিল। এমন সময় শুনতে পেল, বাইরে থেকে কে যেন বলছে, ‘কয়ডা ভিক্ষা দেন গো মা...।’
নুসাইবা দরজা খুলে দেখল, একজন ভিক্ষুক দাঁড়িয়ে আছে। সে তার মাকে গিয়ে বলল, ‘আম্মু, একজন ভিক্ষুক এসেছে।’
আম্মু ১০টি টাকা দিয়ে বললেন, ‘১০ টাকা ভিক্ষুককে দিয়ে আসো।’
নুসাইবা বাইরে এসে ভিক্ষুকের হাতে ১০ টাকা দিল। ভিক্ষুক তার মাথায় হাত রেখে দোয়া করে দিল। নুসাইবা ভিক্ষুকের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল, তার মুখটা শুকনো। সারাদিন কিছু খায়নি মনে হয়।
সে দৌড়ে এসে আম্মুকে বলল, ‘আম্মু, ভিক্ষুক আংকেলের অনেক খিদে লেগেছে মনে হয়। তার মুখটা শুকনো।’
আম্মু নুসাইবার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তাই বুঝি? যাও যাও, জলদি তাকে ডেকে নিয়ে আসো।’
নুসাইবা দৌড়ে গিয়ে ভিক্ষুককে ডেকে এনে বারান্দায় বসতে দিল। তারপর ঘরের ভেতর থেকে ভাত, তরকারি, ডাল এনে তাকে খেতে দিল।
খাওয়া শেষ করে ভিক্ষুক আংকেল নুসাইবার জন্য অনেক দোয়া করল। এরপর তার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল।
ভিক্ষুক চলে যাওয়ার পর আম্মু নুসাইবাকে চুমু দিয়ে বললেন, ‘আজকে তোমার কাজে আমি অনেক খুশি হয়েছি। আল্লাহও খুশি হয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, যারা মানুষকে দয়া করবে, আমিও তাদের দয়া করব। যারা গরিবদের খাবার খাওয়াবে, আমিও জান্নাতে তাদের সুস্বাদু খাবার খাওয়াব। তুমি জান্নাতের খাবার খেতে চাও না?’
নুসাইবা আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরে বলল, ‘হ্যাঁ, চাই আম্মু। অনেক অনেক জান্নাতি খাবার খেতে চাই।’
এরকম ৪০টি হাদিস অনুযায়ী লেখা হয়েছে ৪০টি শিশুতোষ গল্প। একই সঙ্গে সূত্রসহ হাদিসের আরবি, আরবি উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ যুক্ত করা হয়েছে প্রতিটি গল্পে। যাতে শিশুরা প্রতিটি হাদিস সহজে মুখস্ত করে নিতে পারে এবং হাদিসের অর্থ ও মর্ম বুঝতে পারে।
হাদিসের আলোকে প্রতিটি গল্প লেখা হয়েছে শিশুদের মনোজগত চিন্তা করে। তাদের স্বভাব-চরিত্র, আদব-আখলাক, আচরণ, পড়াশোনা, বেড়ে উঠা, চারপাশের পরিবেশ ঘিরে সাজানো হয়েছে গল্পগুলো। হাদিসের শিক্ষা কীভাবে আমাদের সন্তানের জীবন পরিবর্তন করে দিতে পারে, সেই প্রয়াসে রচিত হয়েছে ৫টি বইয়ের এ সিরিজটি: একটি হাদিস একটি গল্প!
মা-বাবা, শিক্ষক বা অভিভাবকদের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি শিশু যদি ৪০টি হাদিস এখনই মুখস্থ করে নিতে পারে, তার এই শিশুকালীন অর্জন হৃদয়ে প্রোথিত রয়ে যাবে সারা জীবন। হাদিসের শিক্ষা সকল দুঃসময়ে তাকে সাহস ও প্রেরণা যোগাবে।
হাদিস অনুযায়ী এমনই যুগোপযোগী গল্প বলেছেন নন্দিত লেখক সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর। আমাদের সময়ের গল্পগুলোই সাজিয়েছেন হাদিস অনুযায়ী। শিশুদের ঈমানি চরিত্র ও জীবন নির্মাণের এক অভিনব আয়োজন এক একটি বই।
সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর
সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর-এর পাঠাগ্রহ মূলত ইতিহাস। ইতিহাসের রাজপথ যেমন, তেমনি অসংখ্য গলি-ঘুপচি চষে বেড়াতে ভালােবাসেন। তুলে আনতে চেষ্টা করেন ইতিহাসের আড়ালে চাপা পড়ে যাওয়া অন্য অনেক ইতিহাসকে।
আন্তর্জাতিক ধর্মদর্শন, লৌকিক-অলৌকিক ধর্ম এবং ধর্মতত্ত্ব বিষয়েও তাঁর আগ্রহ প্রবল। ঐশ্বরিক যে কোনাে জ্ঞান এবং মানবিক বিজ্ঞান তাঁকে। আলােড়িত করে। পাঠাগ্রহের কারণেই তিনি লিখেন মূলত ইতিহাস এবং ধর্মদর্শনের মিশেলে। প্রথাগত ধর্মীয় আবহের বাইরে গিয়ে নির্মাণ করার চেষ্টা করছেন নতুন এক ভাষাভঙ্গি। সাবলীল, প্রাঞ্জল আর সাহসী গদ্য দিয়ে তিনি আমাদের চেনা চিত্রকে দৃশ্যমান করেন নতুন এক উপাখ্যানের আদলে। এটাই তাঁর বিশেষত্ব।
জামেয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) এবং দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স শেষ করে কর্মজীবনে। সাংবাদিকতা এবং সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বেশ কিছুদিন। বর্তমানে মুক্ত পৃথিবীর মানুষ হিসেবে একমাত্র কাজ-লেখালেখি। যা তিনি করতে ভালােবাসেন।