একুশের ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশি বাঙালির জাতীয় জীবনে, রাজনৈতিক জীবনে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। একুশের সঙ্গে একাত্তরের রয়েছে রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা।
দল-নির্বিশেষে একথায় ভিন্নমত দেখা যায় না।
স্বভাবতই সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে এ বিষয় দুটো নিয়ে দেখা যায় নানামাত্রিক বিচার-বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন, বিশেষ করে বিরাজমান পরিস্থিতিতে। এক্ষেত্রে মননশীল বিতর্কও কম নয়।
ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক একুশ ও একাত্তরের তাৎপর্য, পরিণাম সম্পর্কে ইতি ও নেতির ভাষ্যে বিভিন্ন সময়ে যেসব নিবন্ধ লিখেছেন সেগুলোর নির্বাচিত সংকলন একুশ থেকে একাত্তর। এসব রচনার পেছনে যেমন রয়েছে নির্মোহ ও আদর্শ-নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি তেমনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও আনুষঙ্গিক ঘটনার উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ। আর সেখানে রয়েছে এই দুই ইতিহাসকে কেন্দ্র করে জনমানসের প্রত্যাশা, প্রাপ্তি, হতাশা ও অন্তর্নিহিত ক্ষোভের নেপথ্য পরিচয়, যা পরিবেশিত নিরক্ষবিন্দুতে দাঁড়িয়ে। পাঠক এগুলোতে তাঁদের জিজ্ঞাসার কিছু না কিছু জবাব পেতে পারেন।
আহমদ রফিক
প্রাবন্ধিক, কবি ও কলামিস্ট আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯২৯) ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে পরিচিত, তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় তার শিক্ষাজীবন বারবার বিপর্যস্ত হয়। শিল্প ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, মূলত সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন এবং বর্তমানে সম্পূর্ণ সাহিত্যকর্মে সক্রিয়। তিনি রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলা একাডেমীর ফেলো এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জীবন সদস্য। তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে *শিল্প সংস্কৃতি জীবন* (১৯৫৮), *আরেক কালান্তরে* (১৯৭৭), *ভাষা আন্দোলন: ইতিহাস ও তাৎপর্য* (১৯৯১) এবং *রবীন্দ্রনাথের চিত্রশিল্প* (১৯৯৬) অন্তর্ভুক্ত। কবিতাগ্রন্থের মধ্যে *নির্বাসিত নায়ক* (১৯৯৬), *বাউল মাটিতে মন* (১৯৭০), *রক্তের নিসর্গে স্বদেশ* (১৯৭৯) উল্লেখযোগ্য। সাহিত্যক্ষেত্রে তার বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৫ সালে একুশে পদক এবং কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি লাভ করেন।