মি খুবই ছোটো। সবে ক্লাস ওয়ান কি টু। আমি তখন গোলাপীরঙ হাওয়াই মিঠাই খুব ভালোবাসি। কিন্তু ঘণ্টা বাজানো মিঠাইওয়ালা যেদিন গ্রামে আসত, সেদিন হয়তো আমি স্কুলে। সেই ছোটোবেলা থেকেই ছোটো ছোটো বঞ্চনার চিনচিনে ব্যথাগুলো আজও বুকের মধ্যে রিনরিন করে বেজে ওঠে। যখন আমার ক্লাস নাইন, তখন যে আমার জন্য কুল নিয়ে আসত, আমি সেই কুল পাঁচজনে মিলে মজা করে খেয়েছি। যার কুল ভাগ করে খেয়েছি সেই কুলের মধ্যে যে অকুল প্রেম ছিল তখন বুঝব কী করে? যে কূলে আমার জন্যে আকুল ভালোবাসার আহ্বান ছিল, আমি সে কূলের বিপরীতে ঘর বেঁধেছি। যে আমার আমার জন্য সর্বস্ব পণ করেছিল, আমি তাকে চিনতেই পারিনি। যে আমাকে নিঃস্ব করার ফাঁদ পেতেছে, আমি সেই ফাঁদেই ঝাঁপ দিয়েছি। ছোটোবেলার ভুলের মাশুল নিজেই দিয়েছি, সে-সব শোধবাদ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন আমার নিরীহ বড়ো বেলা। এখন আমি মাঝে মাঝে একা ভুল করি, মাশুল দিই আমি আর আমরা মিলে। ছোটো মানুষের ছোটো ভুলে জাতির কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু বড়ো মানুষের ছোটো ছোটো ভুলেরও মাশুল দিতে হয় জাতির প্রতিটি মানুষকে। আরো অনেকের মতো আমার ভেতরেও একজন সুখসুখ ভাবুক কবি বাস করে। সেই কবি মাঝে মাঝেই অনেক ভিড়ের ভেতরে থেকেও নিজের মধ্যে ডুবসাঁতার কাটে, তুলে আনে জলের অতলে তলিয়ে থাকা কাদামাটির গন্ধ। সেই গন্ধসুধার কিছু প্রাণঘ্রাণ ফেসবুকেও মাঝে মাঝেই দিয়েছি। অনেক বন্ধু সে ঘ্রাণ গ্রহণ করেছেন। আমিও তাই সাহস করে সেগুলো ‘একলা সুখের শূন্য দুপুর’-এ রেখেছি।