রূপায়নরা যেখানে থাকে, সেটা মূলত মফস্বল শহর। নাম রূপগঞ্জ। খিলক্ষেত থেকে নয় কি দশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই রূপগঞ্জ বাজার থেকে কিছুদূরে সরু রাস্তা গেছে । রাস্তার শেষ দিকে গাছপালায় ঘেরা সুন্দর সাদা রঙের পুরনো বাড়ি যেটার নাম রিমঝিম, সেই বাড়িটাতে রূপায়নরা থাকে। রূপায়নের দাদা আন্তাজ উদ্দিন খন্দকার বরিশালের নলছিটি থাকতেন। সেখানে তার বিড়ির ফ্যাক্টরি ছিল। দেশ-বিদেশে ঘোরা ছিল তার নেশা। এখানে এসে জায়গাটা পছন্দ হওয়ায় বসতবাড়ি বিক্রি করে, আরো কিছু সঞ্চয় দিয়ে নিজের মনের মতো বাড়ি বানানোর কাজ শুরু করেন। লোকে বলত, আন্তাজ উদ্দিন খন্দকার পাগল কিসিমের লোক। অর্ধেক বাড়ি বানানোর পর টাকায় শর্ট পড়লে ফ্যাক্টরি বন্ধক রেখে এরপর বাড়ির কাজ শেষ করলেন। বাড়ির নাম দিলেন রিমঝিম এবং তারই আদেশে একমাত্র ছেলের প্রথম কন্যাসন্তানের নাম রাখা হয় রিমঝিম। রিমঝিমের জন্মের মাস সাতেক পর আন্তাজ উদ্দিন খন্দকার মারা যান গলায় ফাঁস দিয়ে। শোনা যায়, শেষের দিকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। তার বানানো ‘রিমঝিম' এ সে বেশিদিন থাকতে পারেননি। রূপগঞ্জ বাজারের শুরুতে দুই পাশে দুটো রাস্তা গেছে। বামপাশের রাস্তার শেষ মাথার শেষ বাড়িটাই রূপায়নদের। নানারকম গাছপালায় ঘেরা বাড়িটাকে বাইরে থেকে যতটা শান্ত আর নিরিবিলি মনে হয়, ভিতরটা ঠিক তার উলটো। রোজ সকালে রূপায়নের ঘুম ভাঙে চিৎকার আর ভাঙচুরের শব্দে। সেটা কোনো অসুস্থ মানুষের কাজ না, সুস্থ মানুষেরই কাজ। গতকাল রাতে মাইগ্রেনের ব্যথার কারণে রূপায়ন শেষ রাতে ঘুমিয়েছিল। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠতে অন্যান্য দিনের চেয়ে দেরি হচ্ছে। চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ উপেক্ষা করে সে ঘুমানোর চেষ্টা করল । কিন্তু তখনই রিঙ্কির গলার আওয়াজ পেল ।