আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই একমত, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন । ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম পথিক কংগ্রেস নেতা মতিলাল নেহেরুর নাতনি, বাবা বিখ্যাত পণ্ডিত ও ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু আর মা কমলা দেবীর মেয়ে ইন্দিরা গান্ধী।
বলা হয়, তার রক্তেও ছিল রাজনীতি । আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি না থাকলেও তিনি ছিলেন উচ্চশিক্ষিত, পড়ালেখা করেন শৈশবে সুইজারল্যান্ডে ও পরে অক্সফোর্ডে । ১৯৩৪-৩৫ সালে যোগ দেন শান্তিনিকেতনে । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নামকরণ করেন ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী । সেই থেকে প্রিয়দর্শিনী গান্ধী নামেই পরিচিত হন ইন্দিরা গান্ধী । ১৯৪২ সালের পরপরই সক্রিয় ও ফিরোজ গান্ধীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর ভারতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন । তাকে কারাবন্দীও করা হয়েছিল । তবে তাকে আটকে রাখা সম্ভব হয়নি । জনজোয়ারে তিনি বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে দ্বিগুণ উদ্যমে রাজনীতিতে রাজপথ মাতিয়ে তোলেন । ১৯৬৪ সালে তিনি লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মন্ত্রিসভায় তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত হন । তবে রাজনৈতিক জীবনে পাল তুলে বড় রকমের হাওয়া লাগে ১৯৬৬ সালে । সে বছর ভারতের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধাধমন্ত্রী হন ইন্দিরা গান্ধী । তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে আসা রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করেছেন দক্ষ হাতে । মোট ১৫ বছর সফলভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে সত্যিকারের বন্ধুত্বের পরিচয় দেন । ৮ আগষ্ট, ১৯৭১ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠন করতে তিনি বিশ্বের সব রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের কাছে বার্তা পাঠিয়ে আলোড়ন তোলেন, যার প্রতি সমর্থন প্রসঙ্গে প্রায় ৮০টি দেশের প্রতিনিধি করতালি দিয়ে সাদরে গ্রহণ করেন । এই মহিয়সী নারী ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে শিখ দেহরক্ষী সৎবন্ত সিং ও বেয়ন্ত সিং এর গুলিতে নিহত হন । আজ তাকে শ্রদ্ধাচিত্তে ষ্মরণ করছি ।