এক শিল্পীসত্ত্বার ব্যবচ্ছেদ এবং তার আত্মজীবনীর ভগ্নাংশ বইয়ের কিছু অংশঃ
সুর আর শব্দে গড়া আমি। শব্দকে গড়িয়ে নিই সুরে, আর সুরকে গড়িয়ে নিই শব্দের গা বেয়ে। যেদিন পড়ে থাকবো মর্গে, ভোতা ছুরিকাঁচির কাটাকুটির অপেক্ষায়, দেখবে যতো কাটা হচ্ছে তো বেরোচ্ছে সুর আর শব্দ। ছুরিটা লক্ষ্য করলে দেখবে রক্ত নয়, ছুরি ভরে আছে সুরে। সুরে মোড়া ছুরি দিয়ে যতো আঁচড় কাটা হবে, ততো দেখবে সুর গেঁথে আছে গভীর থেকে গভীরে। সুরে ভরে উঠবে মর্গের নোংরা কক্ষ। ছুরিতে সুর, কাঁচিতে সুর। আমার শিরা-উপশিরায় সমস্ত সুর তখন জং-ধরা ওই কাটাকুটির যন্ত্রপাতিতে। যে সুর- বয়ে বেরিয়েছে আমৃত্যু, মস্তিষ্ক থেকে পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুল অব্দি, সব সুর তখন লাশকাটা ঘরের কোণে কোণে আনাচে কানাচে। মর্গ তখন সুরশালা। নেকড়ের মতো একটানে যখন বুক ফেড়ে রাখা হবে, দেখবে ভিতরে বুদবুদ উঠছে শব্দের।
বড়ো বড়ো শব্দ থেকে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র শব্দে ভরে যাবে হাতের পাতা। হাতের পাতা বেয়ে ডোমের সারা শরীরে কিলবিল করতে থাকবে আমার হৃদপিণ্ড নিঃসৃত শব্দের সরলরেখা। যেনো ভুলক্রমে লাল পিঁপড়ার ঢিবিতে পা পড়া, আর অমনি পিঁপড়া বাহিনীর হামলে পড়া ঢিবি গুঁড়িয়ে দেওয়া আসামীর উপর। তারপর পা বেয়ে পৌঁছে যাওয়া শরীরের অলিগলিতে। আমার শব্দ তেমনি জড়িয়ে পেঁচিয়ে রাখবে মর্গ-কক্ষে থাকা জীবন্ত মানুষ, আসবাব আর মেঝেকে। দেখবে মাংস নেই কোনো। কেবলই শব্দ আর শব্দ। শব্দজাল ঘিরে থাকবে ঝুলে থাকবে কক্ষেক্ষের দৈর্ঘ্য প্রস্থে। মাকড়সার জালের মতো ময়লারঙা জাল নয়। সে জলের রং রুপালি। চকচক করতে থাকবে রোদ ঝলসানো নতুন ঢেউ টিনের মতো। তাকিয়ে থাকা যাবে না শব্দের চোখে চোখ রেখে। অন্ধত্ব গ্রাস করবে দৃষ্টিকে।
একজন শিল্পীর, আজীবন আমৃত্যু সংগ্রাম এক শিল্পীর, সত্তাকে কেটে ছিঁড়ে উঠে এসেছে যে-বিশ্লেষণ, সেটাই উপজীব্য এই উপন্যাসের। এই রচনা তাই শুধু একটা উপন্যাস হয়ে নেই, বরং প্রতিনিয়ত-রক্তাত্ত-হতে-থাকা সেই শিল্পীর আত্মজীবনীর এক টুকরা অংশ বটে।
সাজিয়া সুলতানা পুতুল
সাহিত্যের সঙ্গে সংযােগ কিশােরীবেলা থেকে; রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ। দিয়ে পুতুলের সাহিত্যে হাতেখড়ি। রবীন্দ্রপ্রেম এতটাই প্রগাঢ় হয়ে। পড়ে, দশম শ্রেণির চৌকাঠ পেরােবার আগেই সমগ্র রবীন্দ্ররচনাবলী। পড়ে ওঠা! তারপর জীবনানন্দের নির্জন বিষন্ন পৃথিবীতে আমৃত্যু। অধিবাসগ্রহণ। ঠিক তার মাঝখানটায় বুদ্ধদেব বসু আর হুমায়ুন আজাদের বিশুদ্ধ ভাষাশিল্পকলাবাদী সাহিত্যের ঝরনাধারায় নিরন্তর। অবগাহন। এই নিয়েই পুতুলের সাহিত্যিক সত্তার স্ফুরণ আর। ক্রমবিকাশ। কবিতা পুতুলের প্রথম মাধ্যম, তাই সাহিত্যের জগতে। পুতুলের আত্মপ্রকাশটা কাব্যগ্রন্থ দিয়ে, ২০১৬ তে এসে, "পুকাব্য : উপক্রমণিকা", যা প্রথম কাব্যগ্রন্থ। সেই থেকে থেমে। নেই পুতুলের গ্রন্থপ্রকাশ, ২০১৭ তে “পুতুলকাব্য : দ্বিতীয়। অধ্যায়", পরের বছর, ২০১৮ তে, পুতুলের আবির্ভাব বাঙলা গদ্যে ; প্রথম উপন্যাস, " একটি মনস্তাত্ত্বিক আত্মহনন এবং তার পুতুলকাব্যিক প্রতিবেদন”। পুতুলের গদ্য মূলত, এবং শেষ পর্যন্ত, কবিতাই। উপন্যাস প্রসঙ্গে পুতুলের বক্তব্য, “আমার উপন্যাসগুলাে। প্রকৃত অর্থে উপন্যাসের ছদ্ম আবরণে একেকটা কাব্যগ্রন্থ! আমি তাই । আমার উপন্যাসধারার নাম দিয়েছি পুতুলকাব্যিক উপন্যাস।" নারীর। মনস্তত্ত আর তার বিশ্লেষণ পুতুলকাব্যিক উপন্যাসের অন্যতম বিষয় ।। সাহিত্যিকসত্তার সঙ্গে পুতুলের অন্য সত্তাটা হচ্ছে সংগীতের । পুতুলের ভাষায়, "সাহিত্য আর সংগীত আমার এক পুতুলসত্তার দুই। শৈল্পিক উৎসারণ।" সাহিত্যে আত্মপ্রকাশের প্রায় এক দশক আগেই। সংগীতশিল্পীরূপে পুতুলের আবির্ভাব বাংলাদেশের সংগীত অঙ্গনে ।। প্রতিভা অন্বেষণ অনুষ্ঠান "কোজ আপ ওয়ান : তােমাকেই খুঁজছে। বাংলাদেশ" এর মাধ্যমে পুতুলের পরিচিতি, তারপর নিজ সাধনায় । তার প্রতিষ্ঠা । নিজের লিরিকে, সুরে আর কম্পােজিশনে পুতুলের। প্রথম আবির্ভাব ২০১২ তে, 'পুতলগান' দিয়ে। সেই থেকে প্রকাশিত। হয়ে চলেছে তার লিরিক আর কম্পােজিশন, যার অধিকাংশই | নিরীক্ষাধর্মী কাজ। সংগীতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন । 15696 University of Development Alternative (36 পুতুল বলেন, “সাহিত্য আর সংগীত, সংগীত আর সাহিত্য, এ-ই আমার আমৃত্যু ব্রত, আজীবন সাধনা ।"
Title :
এক শিল্পীসত্ত্বার ব্যবচ্ছেদ এবং তার আত্মজীবনীর ভগ্নাংশ