এই বইতে সংকলিত দুটি উপন্যাসই মূলত রাজনৈতিক। রাজনীতির অনুষঙ্গ হিসেবে এসেছে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জীবনের চালচিত্র। প্রথম উপন্যাস এক এগারো সময়সীমা স্বল্পপরিধির, ২০০৬ ডিসেম্বর থেকে ২০০৮’র ডিসেম্বর পর্যন্ত। রাজনৈতিক সহিংসতা এবং অরাজকতায় বিপন্ন জাতির রক্ষায় ঘোষিত হয়েছিল জরুরি অবস্থা। সেই সময়ের শাসকদের প্রতিশ্রুতি ছিল রাজনীতিকে দূষণমুক্ত করে সুস্থ গণতন্ত্রের যাত্রা নিশ্চিত এবং এর জন্য দুর্নীতিসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা দূর করা। উপন্যাসে এই দুই বছরের পরিণতিতে বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজে কী পরিবর্তন এসেছিল তার ওপর সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হয়েছে। দ্বিতীয় উপন্যাস অন্যজীবন-এর ক্যানভাস অনেক বড়, ১৯৬৫ থেকে ২০০৬ সালের ডিসেম্বর যখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। উপন্যাসটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকে শরু করে সাম্প্রতিককালের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজের বাস্তবতার বীক্ষণ। প্রথম উপন্যাসের সঙ্গে তাই এ উপন্যাসের মিল রয়েছে, একটি অন্যটির সম্পূরক। লেখকের নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি এবং ঘটানার বলিষ্ঠ বিশ্লেষণ উপন্যাস দুটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সৃজনশীল ব্যাখ্যা। পাঠককে উপন্যাস দুটি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজ নিয়ে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করবে।
হাসনাত আবদুল হাই
হাসনাত আবদুল হাই-এর জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায়। পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশাের, ফরিদপুর শহরে । কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনােমিকস্ এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা। ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যােগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন ১৯৫৮ সালে ছােটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছােটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালােচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল। বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্রবাস জীবনে। প্রকাশিত ছােটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্রমণ-কাহিনী ছয়। সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মােহাম্মদ আকরম খাঁ পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং একুশে পদক।