"ইযহারুল হক" বইটির 'কৈফিয়ত' নামক অংশ থেকে নেয়াঃ
১৭৫৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের বেদনাদায়ক অবসানের পর থেকে ইংরেজ শাসন শুরু হয়। আর এ বিদেশী শাসক গােষ্ঠীর ছত্রচ্ছায়ায় খ্রিস্টান মিশনারিরা এ উপমহাদেশে তাদের মিশনারি কার্যক্রম জোরদার করে। মিশনারিদের এই অপতৎপরতা উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে শুরু হয়; যার ফলে দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের পক্ষে ঈমান রক্ষা করা এবং ঈমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
মুসলমানদের এ চরম দুর্দিনে আল্লামা রাহমাতুল্লাহ ইবন খলীলুল রহমান কীরানবি রাহিমাহুল্লাহ যেন মহান আল্লাহর রহমত হিসেবে আবির্ভূত হন। বক্তৃতা, বির্তক ও লেখনীর মাধ্যমে তিনি ইসলামের শাশ্বত বাণীকে জনসমক্ষে তুলে ধরেন এবং খ্রিস্টান মিশনারিদের অপপ্রচারের বেশির ভাগ জবাব তিনি তাদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের উদ্ধৃতির মাধ্যমে উপস্থাপন করে বিস্ময়করভাবে মিশনারি অপতৎপরতা প্রতিহত করেন।
প্রসঙ্গত, ১৮২৯ সালে খ্রিস্ট ধর্মীয় প্রচারক মি: কার্ল গােটালেব ফাভার খ্রিস্টান পাদরিদের গতানুগতিক মিথ্যাচার, বিকৃতি, অপপ্রচার ও বিষেদাগার সম্বলিত মীযানুল হক (Scale of Truth) নামক একটি পুস্তক রচনা করেন। মূল পুস্তকটি জার্মান ভাষায় রচিত হলেও তা উর্দু ও ফারসী ভাষায় অনুবাদ করে এ উপমহাদেশের মুসলমানদের মাঝে ব্যাপক প্রচারণা চালানাে হয়। এমনকি তারা এটাও দাবি করতে থাকে যে, এ পুস্তকের যুক্তিগুলাে খণ্ডন করার সাধ্য কোন মুসলমান আলিমের নেই।
আল্লামা রাহমাতুল্লাহ কিরানী মিশনারিদের এই অপতৎপরতার জবাবে এগিয়ে আসেন। তিনি মীযানুল হক এর জবাবে ইযহারুল হক (সত্যের বিজয়) শীর্ষক আরবী ভাষায় একখানি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন।
ভারতের ইংরেজ শাসকগণ এবং খ্রিস্টান প্রচারকগণ চেয়েছিলেন রাহমাতুল্লাহর কণ্ঠকে স্তব্দ করে দিতে। সাময়িকভাবে সামরিক বিজয় তারা লাভ করেছিলেন। তারা ভেবেছিলেন এ বিজয়ের মাধ্যমেই তারা রাহমাতুল্লাহকে থামিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ছিল ভিন্ন। জিহ্বা, কলম ও তরবারীর এ মহান মুজাহিদকে আল্লাহ হেফাযত করলেন; তাঁকে তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলিম হিসেবে ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সম্মানিত করলেন এবং কর্মময় দীপ্ত জীবন দান করলেন।
ইযহারুল হক গ্রন্থখানি তার অনবদ্য সৃষ্টি। এই মূল্যবান পুস্তকটি পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদ করেন বিশিষ্ট আলিম ও পণ্ডিত ড. খােন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ)।