ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ সমকালীন বাংলাদেশে সমাজের উঁচু শ্রেণিতে ওঠার যে উর্ধ্বশ্বাস প্রতিযোগিতা সেখানে জড়িত কয়েকটি মানুষের জীবনের কাহিনী নিয়ে লেখা এই উপন্যাস। কাহিনীর বর্ণায় গতি রয়েছে, ঘটনার বৈচিত্র্য কৌতূহল উদ্দীপক, বিভিন্ন চরিত্রের আচরণ প্রায় অবিশ্বাস্য। সব মিলিয়ে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে দেয় এই লেখা। উপন্যাসের বিষয় খুব নতুন নয়, এর চরত্রেরাও বেশ পরিচিত। ন্যারেটিভের কুশলতায় এবং ঘটনা বিন্যাসের অভিনবত্বে কাহিনী পাঠকের মনোযোগ আকৃষ্ট করে। একটা বিশেষ বক্তব্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে লেকা হলেও ‘ইঁদুর দৌড়’ নিষ্প্রাণ নয় এবং যান্ত্রিকভাবে কাহিনীর বর্ণনা করেনি। এর চরিত্রেরা যে রক্ত-মাংসের মানুষ তা তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত অনুভূতি দিয়েই প্রমাণ করে তারা। এই মানবিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই চরিত্রেরা তাদের দোষ-ত্রুটি, অধঃপতন, অনাচার-দুর্নীতি সত্ত্বেও পাঠকের শুধু মনোযোগ আকর্ষণ করে না, তাদের সহানুভূতিও দাবি করে।
লেখক উপন্যাসের চরিত্র চিত্রনে এক দিকে যেমন নির্মম এবং দৃঢ় অপরদিকে তাদের দুর্বলতার জন্য দায়ী করেন সমাজব্যবস্থাকেই। তিনি অধঃপতিত চরিত্রদের শাস্তি প্রদানের চেয়ে বেশি করে আশা করেন মূল্যবোধের পরিবর্তন। সুস্থ প্রতিযোগিতার বিপক্ষে তিনি নন, যা তার কাছে গ্রহণযোগ্য নয় তা হলো ইঁদুর দৌড় যেখানে যে কোনো মূল্যেই উপরের সিঁড়িতে ওঠা অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
হাসনাত আবদুল হাই
হাসনাত আবদুল হাই-এর জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায়। পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশাের, ফরিদপুর শহরে । কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনােমিকস্ এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা। ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যােগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন ১৯৫৮ সালে ছােটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছােটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালােচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল। বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্রবাস জীবনে। প্রকাশিত ছােটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্রমণ-কাহিনী ছয়। সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মােহাম্মদ আকরম খাঁ পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং একুশে পদক।