নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় তিনি লিখেছেন গল্প, উপন্যাস, নাটক, ছোটোদের জন্য প্রচুর লেখা সুনন্দ ছদ্মনামে ধারাবাহিক জনপ্রিয় জার্নাল। তিনি ছিলেন বিখ্যাত অধ্যাপক, সুদর্শন ও সু-বক্তা। তার জন্য
তাকে আমি ভালোবাসতাম। ভালোবাসতাম তার উদার, মধুর স্বভাবের জন্য, ভালোবাসতাম তার পাণ্ডিত্যের জন্য। ভালোবাসতাম তার প্রতিভার জন্য।-বনফুল
নারায়ণের দৃষ্টি ছিল দিগন্ত থেকে দিগন্ত পর্যন্ত প্রসারিত। ...তাঁর উপন্যাস অনেক, ছোটোগল্প তার থেকেও বেশি। ছোটোগল্পে শিল্পী হিসেবে বোধকরি অতি সুনিপুণ। তাঁর কাছে গল্প প্রতিযোগিতায় একবার আমরা সকলেই পরাজিত হয়েছিলাম। প্রতিযোগিতাটি পরিচালনা করেছিলেন শ্রদ্ধেয় নরেন্দ দেব।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
দিনাজপুর জেলার বালিয়াডাঙি গ্রামে ২৭ জানুয়ারি ১৯১৭ সালে জন্ম । আদিনিবাস বরিশাল জেলার বাসুদেব পাড়া গ্রামে। শিক্ষা জীবন দিনাজপুর, বরিশাল ও কলকাতা। পােষাকী নাম তারকনাথ গঙ্গোপ্যধ্যায়। শৈশব, কৈশাের ও প্রথম যৌবন কেটেছে উত্তর ও পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন স্থানে। সেই সূত্রেই বাংলায় নদনদী, পল্লীজনপদ ও আরণ্যক-প্রকৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়। মেধাবী ও কৃতী ছাত্র। ১৯৪১ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম.এ. পাস করেন। সিটি কলেজে চাকরি নিয়ে জলপাইগুরি আনন্দচন্দ্র কলেজ ছেড়ে চলে আসেন। তারপর থেকে আমৃত্যু কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েই ছিলেন। তার অসাধারণ স্মরণশক্তি ছিল । সাহিত্য চর্চা শৈশব থেকেই শুরু হয়। ভারতবর্ষে ধারাবাহিকভাবে মুদ্রিত প্রথম উপন্যাস উপনিবেশ (অখণ্ড) প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সাহিত্য রসিক সমাজে অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখকের আসনে প্রতিষ্ঠিত হন। প্রথম প্রকাশিত গল্প সংকলনের নাম বীতংস (১৯৪৫)। প্রকাশিত গল্প সংকলন, উপন্যাস, নাটক এবং প্রবন্ধের বই আনুমানিক শতাধিক-এর মধ্যে কিশােরদের জন্য গল্প ও উপন্যাস আছে । তার সৃষ্টি টেনিদা বাংলা কিশাের সাহিত্যের অমর চরিত্র। ক্যালকাটা কেমিক্যালের উদ্যোগে প্রকাশিত কথাশিল্পী গল্প সংকলনে তার ইতিহাস' গল্পটি শ্রেষ্ঠগল্প রূপে জনমত লাভে ধন্য। হয়। তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা আয়ােজিত আনন্দ পুরস্কারও লাভ করেন। বসুমতি পত্রিকায় উদ্যোগে আয়ােজিত-সাহিত্য পুরস্কারও লাভ করেন, দেশ-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত সনন্দর জার্নাল-এর জন্য, শ্রেষ্ঠ সাহিত্য সৃষ্টির জন্য কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদক এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বী কিশাের সাহিত্য সৃষ্টির জন্য রঞ্জিত স্মৃতি পুরস্কারও পান। ৮ নভেম্বর ১৯৭০ সালে মাত্র তিপান্ন বৎসর বয়সে তার মহাপ্রয়াণ ঘটে।