বাংলা সাহিত্য-সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী 1865 সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসটির রচনাকাল 1862 সাল থেকে 1864 সাল নাগাদ। বঙ্কিম সহোদর পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অনুসারে, এর কাহিনী গড়ে উঠেছে পাঠানদের দ্বারা গড় মান্দারণ জমিদার স্ত্রী ও কন্যা এবং তাদের সাহায্যার্থে প্রেরিত রাজপুতকুলতিলক জগৎসিংহ বন্দী হওয়াকে কেন্দ্র করা নিয়ে। বঙ্কিমচন্দ্রের জীবিতকাল পর্যন্ত দুর্গেশনন্দিনী’র তের সংস্করণ বের হয় এবং ইংরেজি, হিন্দুস্তানি, হিন্দি ও কানাড়ি অনুবাদ প্রকাশিত হয়। শেষ সংস্করণ মুদ্রিত হয় 1893 সালে। প্রকাশের পূর্বে এই উপন্যাসখানির উৎকর্ষাপকর্ষ সম্বন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র নিজেই তেমন স্থিরনিশ্চয় ছিলেন না। যদিও সেকালে দুর্গেশনন্দিনী বাংলা সাহিত্যে ভাষা ও ভাবের নবযুগ প্রবর্তন করেছিল।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
উনিশ শতকের বাঙালি সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তাঁর অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। তাঁকে সাধারণত প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে গীতার ব্যাখ্যাদাতা হিসাবে, সাহিত্য সমালোচক হিসাবেও তিনি বিশেষ খ্যাতিমান। তিনি জীবিকাসূত্রে ব্রিটিশ রাজের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যপত্র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছদ্মনাম হিসেবে কমলাকান্ত নামটি বেছে নিয়েছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয় বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নৈহাটি শহরের নিকটস্থ কাঁঠালপাড়া গ্রামে। তারিখ ২৬ জুন, ১৮৩৮ অর্থাৎ ১৩ আষাঢ় ১২৪৫। চট্টোপাধ্যায়দের আদিনিবাস ছিল হুগলি জেলার দেশমুখো গ্রামে। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রপিতামহ রামহরি চট্টোপাধ্যায় মাতামহের সম্পত্তি পেয়ে কাঁঠালপাড়ায় আসেন এবং সেখানেই বসবাস শুরু করেন। রামহরির পৌত্র যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের তৃতীয় পুত্র বঙ্কিমচন্দ্র,মাতা দুর্গাসুন্দরী দেবী,বঙ্কিমের পূর্বে তাঁর আরও দুই পুত্রের জন্ম হয় – শ্যামাচরণ ও সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্কিমের জন্মকালে তিনি সদ্য অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার ডেপুটি কালেক্টর পদে উন্নীত হয়েছিলেন। মৃত্যু : ৮ এপ্রিল ১৮৯৪ ।