ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ আর মুর্তজা বশীর। বহুভাষাবিদ পিতা আর শিল্পী পুত্র বৈশিষ্ট্যে একেবারেই বিপরীতমুখী। দুজনের লেখা চিঠিপত্র, স্মৃতিকথা আর ড্রয়িংয়ে এ বই খ্যাতিমান দুই পিতা-পুত্রের সম্পর্কের আশ্চর্য রসায়নের দলিল।
বাবা বহুভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ছেলে শিল্পী মুর্তজা বশীর। বাবা খ্যাতিমান। ছেলেও কম নন। কিন্তু দুজনের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য একেবারেই বিপরীতমুখী। বাবা কমনীয়, পণ্ডিত ও ধার্মিক। ছেলে বিদ্রোহী, শিল্পী, কমিউনিস্ট। বাবা চেয়েছেন ছেলে বেড়ে উঠুক পরিশীলিত সামাজিক হয়ে। ছেলে চাইলেন বাবার প্রভাবের গণ্ডির বাইরে নিজের পরিচয়ে উঠে দাঁড়াতে। দুর্বিনীত সন্তান মুর্তজা বশীর শেষ বয়সে আবার প্রবলভাবে ফিরেও এলেন বাবা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কাছে। নিজেদের চিঠিপত্র, লেখা আর ড্রয়িংয়ে এ বই তুলে ধরেছে দুই বিখ্যাত পিতা-পুত্রের সম্পর্কের সজীব রসায়ন।
মুর্তজা বশীর
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র কনিষ্ঠ সন্তান মুর্তজা বশীর (জন্ম ১৯৩২)। ১৯৫৪ সালে ঢাকায় গভর্নমেন্ট ইন্সটিটিউট অফ আটর্স্ (বর্তমানে চারুকলা ইন্সটিটিউট) থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ ম্যুজিয়ম থেকে টিচার্স ট্রেনিং সার্টিফিকেট (আর্ট এ্যাপ্রিসিয়েশন) লাভ করেন। ১৯৫৬-৫৮ সালে ইতালীর ফ্লোরেন্সে একাদেমী দ্যেল বেল্লে আরটিতে চিত্রকলা ও দেয়াল চিত্র বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৯৭১-৭৩ সালে প্যারিসের ইকোলে ন্যাশিওনাল সুপিরিয়্যর দ্য বোজার্ট ও আকাদেমী গোয়েৎস-এ মোজাইক ও ছাপচিত্র বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৯৭৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে একমাসের জন্য আমেরিকায় আটটি ষ্টেটের বিভিন্ন ম্যুজিয়ম পরিদর্শন করেন। ১৯৬৩ সালে উর্দু চলচ্চিত্র কারোয়াঁর কাহিনী ও চিত্রনাট্য এবং ১৯৬৪ সালে নদী ও নারী চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনা ও শিল্প নির্দেশনা করেন। ১৯৭৯ সালে তাঁর উপন্যাস আলট্রামেরীন এবং ২০০১ সালে নির্বাচিত রচনাবলী নিয়ে মুর্তজা বশীর: মূর্ত ও বিমূর্ত শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশ হয়। ১৯৮৯-৯৩ বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল অফ্ দ্য নিউমিসম্যাটিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়াতে প্রাক-মুঘল যুগে বাংলার সুলতানদের শাসন আমলে প্রচলিত মুদ্রা বিষয় গবেষণাধর্মী একাধিক মূল্যবান নিবন্ধ প্রকাশ করেন। ১৯৮৭ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিল ফেলোশীপে দু’মাসের জন্য লন্ডনে যান এবং ১৯৮৮ সালে ভারতের আই.সি.সি.আর ফেলেশীপে দিল্লী, বেনারস ও কলকাতার বিভিন্ন জাদুঘরে ‘বাংলা চিত্রকলার ঐতিহ্য’-এর ওপর গবেষণা করেন। ১৯৯৩ ও ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে পুনরায় আই.সি.সি.আর-এর অনুদানের ‘মন্দির টেরাকোটা শিল্প’-এর ওপর পশ্চিম বঙ্গের প্রায় তিনশত গ্রামে সরজমিনে পর্যবেক্ষণ করার জন্য মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করেন। চিত্রশিল্পে অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কার এবং ১৯৮০ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন এবং ১৯৯৮ সালে প্রফেসররূপে অবসর গ্রহণ করেন।
Title :
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ: বাবার কাছে ফেরা (হার্ডকভার)