ভূমিকা হাতেমতাঈ মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নাই। তিনি চিরজীবী ও নিত্য বিরাজমান, আকাশ ও মাটি যা কিছুই অস্তিত্ব রয়েছে সবই তাঁর। তিনি মহান, মহীয়ান। মানুষ জাগতিক সুখের আশায় ধম-দৌলত কামনা করে। সে অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রয়াসে ধন-পার্থিব বস্তু লাভ করলেও সুখ-শান্তি পায় না। হাতেমতাঈ বাল্যের দিনগুলি চরমতম ভোগবিলাসের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছিলেন। তাঁর পিতা আলমপনা ছিলেন এ্যামন এলাকার নামদার বাদশাহ। কৈশোরে পা দিতে না দিতেই ধমন-দৌলত ও ভোগবিলাসের প্রতি অনীহা দেখা দেয়। তাই তো তিনি আপনজনের অগোচরে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন আল্লাহর বান্দা অসহায় আর্তজনের কষ্ট হয়রানি নিবৃত্ত করতে। আল্লাহর বান্দাদের মুখে একটু মাত্র হাসি ফুটাতে তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বহুবার চরমতম বিপদের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়তেও দ্বিধা করেন নি। মানবতার সেবাই আল্লাহর সেবা এবং প্রকৃত মুক্তির পথ, একথা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন বলেই তো তিনি হাজারো দুঃখ কষ্ট স্বীকার করে হাসিমুখে সারা আরব দুনিয়া হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে উৎসাহী হয়েছিলেন। আল্লাহকে আমরা চোখে দেখতে পাই না, আমরা দেখি মানুষকে। তাই তো তাঁর দৃষ্টিতে মানুষই ছিল মহান। তাঁর মানবসেবার সুমহান ব্রত উদ্যাপনের বিবরণ বর্তমান গ্রন্থ ‘দস্তান-এ হাতেমতাঈ’-এ নিষ্ঠার সঙ্গে তুলে ধরতে প্রয়াসী হয়েছি। গ্রন্থটি পাঠক-পাঠিকাদের কাছে সমাদৃত হলে আমার পরিশ্রম ও প্রয়াস সার্থক হবে।
মশিউর রহমান
৪ জুন । চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার খয়ের হুদা গ্রামের একান্নবর্তী পরিবারে। বাবা ছিলেন ব্যবসায়ি। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বাবার ব্যবসায় ভাটা পড়ে। সেই সাথে সারা বাংলার দুর্ভিক্ষের ছোঁয়াটাও পুরােপুরি এসে পড়েছিল পরিবারে। সেখান থেকেই দারিদ্র্যের কষাঘাতে জীবন অতিবাহিত হতে থাকে । তবুও থেমে থাকেনি কোনােকিছু। জীবনকে চিনতে হয়েছে, জানতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে বলা যায় দারিদ্র্য তাকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছে। বাবা-মা ও বড় ভাইদের অনুপ্রেরণায় নিজেকে বিকশিত করতে পেরেছেন। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশােনা করলেও, সাহিত্যে আগ্রহের কারণে বাংলা সাহিত্যে এম.এ. করেছেন। ইন্টারমিডিয়ের পর কর্মজীবনের শুরু প্রথমে টিউশনি, পরে কম্পিউটার গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি । বর্তমানে প্রচ্ছদ ডিজাইনার হিসেবে নিজের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এ পর্যন্ত দুই সহস্রাধিক বইয়ের প্রশংসিত প্রচ্ছদ ডিজাইন করে সুধীজনের প্রশংসা অর্জন করেছেন। লেখালেখির অভ্যাস ছেলেবেলা থেকেই। গ্রামের ক্লাবের দেয়াল পত্রিকায় প্রথম ছােটগল্প ‘সংগ্রামই জীবন' প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালে । ১৯৯০ সালে ঢাকায় আসার পর দেশের প্রায় সব জাতীয় দৈনিক ও সাহিত্য ম্যাগাজিনে তার লেখা নিয়মিত ছাপা হচ্ছে। ছােটদের জন্য লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবােধ করেন। ছােটদের জন্য প্রকাশিত বই : মেঘ ও বৃষ্টির বন্ধুরা, একাত্তরের ছেলেটি, আমরা করবাে জয়, ভূতের সাথে হ্যান্ডশেক, ওরে বাবা ভূ-উ-ত, নীলডুমুরির ভয়ংকর রাত, অদৃশ্য মানব, ভূত গােয়েন্দা রহস্য, বিজ্ঞানের প্রথম পাঠ, বিজ্ঞানের দ্বিতীয় পাঠ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিচিত্র জগৎ, ছােটদের জগদীশচন্দ্র, ছােটদের মাদার তেরেসা, মাদার তেরেসা জীবন ও কর্ম, ছােটদের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বাংলার বীরশ্রেষ্ঠ ইত্যাদি । টইটম্বুর’-এ প্রকাশিত শিশুতােষ গল্প ‘ছােট্ট জোনাকি’র এনিমেটেড কার্টুন নির্মাণ করে একুশে টিভি (২০১১ সালের ঈদের অনুষ্ঠানের জন্য)। বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ : বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা, গাছ লাগাই পৃথিবী বাচাই, ডাইনােসর ও প্রাচীন পৃথিবীর জীবজন্তু, পৃথিবী ও সৌরমণ্ডল, সাগর থেকে মহাসাগর, গ্যালাক্সির পথে পথে, রহস্যময়ী চাদ । বড়দের জন্য প্রকাশিত বই : প্লেটোনিক প্রেম, ওরা বৃষ্টিতে ভিজেছিল, প্রচ্ছন্ন প্রণয়, উড়ে যায় স্বপ্নের পাখিরা ।