সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে যে মরণব্যাধি, মাদকাসক্তি, সেই বিষয় নিয়ে এই উপন্যাস। দংশনে রয়েছে সকমালীন সমাজের অবক্ষয়ের এক মারাত্মক চিত্র। এ এমন এক ভয়াবহ মহামারী যা ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের সর্বস্তরে, উপর থেকে নিচে। সব শ্রেণীর আর বয়সের মানুষ এর অসহায় শিকার। মাদকাসক্তির পেছনে কাজ করছে এক শ্রেণীর মানুষের লোভ এবং লালসা। অর্থের বিনিময়ে তারা সমাজকে বিষাক্ত করে বসবাসের অযোগ্য করে তুলতেও ইতস্তত করে না। অর্থগৃধ্নু এই সব মানুষ এক সময় উপলব্ধি করে যে যেখানে তারা দাঁড়িয়ে তারই নির্ভরশীলতা ধ্বংস করে ফেলছে তারা। মাদকাসক্তির যারা শিকার তারা একঘেয়েমিতে ভোগে, অথবা চায় দুঃখ-কষ্টের জীবন থেকে সাময়িক উত্তেজনার ভিতর পরিত্রান পেতে। দেহ এবং মনকে বিনষ্ট করে নানা শ্রেণীর, নানা বয়সের এই সব মানুষ ধ্বংসের পথে এগিয়ে যায় অবধারিতভাবে। এদেরকে কীভাবে রক্ষা করা যেতে পারে এই প্রশ্ন তুলেছে দংশন উপন্যাস। দংশনের ভয়াবহতা সম্বন্ধে সচেতন করার জন্য এই কাহিনী।
হাসনাত আবদুল হাই
হাসনাত আবদুল হাই-এর জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায়। পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশাের, ফরিদপুর শহরে । কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনােমিকস্ এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা। ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যােগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন ১৯৫৮ সালে ছােটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছােটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালােচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল। বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্রবাস জীবনে। প্রকাশিত ছােটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্রমণ-কাহিনী ছয়। সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মােহাম্মদ আকরম খাঁ পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং একুশে পদক।