‘দোলগোবিন্দের কড়চা’ বইয়ের কিছু অংশঃ বালিগঞ্জের একটি অ্যামেরিকান প্যাটার্নের দ্বিতল বাড়ি। সামনে নীচের তলার মত ওপরেও দু'প্রান্তে দুটি ঘর, প্রত্যেকটির সামনে বাহারে রেলিং দেওয়া একটি করে গোল ব্যালকনি। দুটি ঘরেরই পাশে নিজের নিজের স্পাইর্যাল বা ঘোরানো সিঁড়ি ব্যালকনির ধারে গিয়ে উঠেছে। উদ্দেশ্যটা যদি কেউ বাইরে থেকে এসে ঘরের কারুর সঙ্গে দেখা করতে চায়, সোজা উঠে যেতে পারে, পড়বে গিয়ে ব্যালকনিতে। সামনেই ঘরের দরজা। সন্ধ্যা, চেরাগ-বাতির সময় হয়ে গেছে। দোলু বাড়ির সামনের ছোট বাগানটুকু পেরিয়ে ডানদিকের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এল। দরজাটা বন্ধ, সোজা বাইরের সঙ্গে যোগ রয়েছে বলে ঘরে কেউ না থাকলে বন্ধই থাকে। দোলু কড়া ধরে নাড়ল। উত্তর নেই। ‘সরিৎ’—বলে একটু জোরেই হাঁক দিল। একবারে হল না, দ্বিতীয়বারের পর সরিতের মতই চটি টেনে টেনে আসবার শব্দ শোনা যাচ্ছে, ঘরের ও-প্রান্তের দরজায় প্রবেশও করল, তবে গতি বড় অল্প। এগিয়েই আসছে, তবু দোলু অসহিষ্ণুভাবে একটা শেষ তাগাদ দিল, ‘খোল না রে রাস্কেল!’ ‘কে?’ ভারী গলা। প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গেই খুলে গেল দরজাটা…..
বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়
হাস্যরসের ছোটগল্পের পশরা নিয়ে ১৯৩০-এর দশকে বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হয়েছিলেন বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় (১৮৯৬-১৯৮৭)। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বোঝা গিয়েছিল যে, হাস্যরস তাঁর রচনার মূল উপাদান হলেও তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কারুণ্য। জীবনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন তিনি। মানুষের স্বভাবজ খেয়ালিপনা ও আচরণগত অসংগতিতে যেমন তিনি হাসির খোরাক পেয়েছেন, তেমনি জীবনের নানা ক্ষেত্রে বিচিত্র দ্বন্দ্ব-সন্ধি থেকে উচ্ছ্বসিত বেদনারও সন্ধানলাভ করেছেন। তার রচনায় তাই হাস্য ও করুণের এমন মেশামেশি। তাঁর অবিস্মরণীয় চরিত্র রাণু যেমন পড়াশোনায় ফাঁকি দেওয়ার নিত্যনতুন ফন্দি এঁটে আমাদের হাসির উদ্রেক করে, তেমনি তার বাল্যবিবাহের কালে শৈলেনকাকার কাছে আত্মশুদ্ধির অঙ্গীকার করে আমাদের চোখ অশ্রুসজল করে দেয়। নীলাঙ্গুরীয় (১৯৪২) বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস।