আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উপরন্তু অর্থনৈতিক জোট হিসেবে আসিয়ানের উত্থান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন একটি মাত্রা দিয়েছে। যদিও ৯/১১ এর ঘটনায় এ অঞ্চলও আক্রান্ত হয়েছিল। এবং সিরিয়ায় আইএস-এর উত্থানের পরও, এ অঞ্চলে আইএস সমর্থকদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়েছে। তারপরও এক ধরনের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এ অঞ্চলের গুরুত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অঞ্চলের রাজনীতির কতগুলাে বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- (১) গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, (২) মুসলিম স্বাতন্ত্রবােধ, (৩) একদলীয় শাসন, (৪) বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, (৫) সামরিক বাহিনীর ভূমিকা ইত্যাদি।
গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির কথা যদি বলা হয়, তাহলে বলতে হবে এ অঞ্চলের বিকাশমান গণতন্ত্রের সাথে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির কোনাে মিল পাওয়া যাবে না। এখানে নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচন হচ্ছে সত্য, কিন্তু তাতে করে সত্যিকার অর্থে জনমত কতটুকু প্রতিফলিত হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সিঙ্গাপুরে, কিংবা কম্বােডিয়ায় গণতন্ত্রের নামে একদলীয় কর্তৃত্ব বজায় রয়েছে। সিঙ্গাপুর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিয়েছে বেশি, কিন্তু কম্বােডিয়ায় এমনটি নেই। ইন্দোনেশিয়া কিংবা থাইল্যান্ডে গণতন্ত্রের বিকাশ অল্প দিনের। তবে পর্দার’ অন্তরালে সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে খাটো করে দেখা যাবে না। সেনাবাহিনী ইন্দোনেশিয়ায় এই মুহূর্তে প্রভাব খাটাচ্ছে না বটে, কিন্তু সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে বিবেচনায় নিতে হবে।
মিয়ানমার তার পুরনাে বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত একটি রাজনৈতিক কাঠামােয় ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারাই সেখানে মূলত দেশ চালাচ্ছেন। তবে একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে সেনাবাহিনী এখন উদার। তারা দেশটিকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। একটি নির্বাচন সেখানে হয়েছে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাও চালাচ্ছে। কিন্তু পর্দার অন্তরালে
ড. তারেক শামসুর রেহমান
ড. তারেক শামসুর রেহমান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য। তিনি বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান। অধ্যাপক রেহমান গত দু'দশক ধরে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ও বৈদেশিক নীতি নিয়ে গবেষণা করছেন। এর ফলশ্রুতিতে তিনি এসব বিষয়ে বেশ ক'টি গ্রন্থও প্রকাশ করেছেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রির অধিকারী ড. রেহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন এবং জার্মানী থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তুলনামূলক রাজনীতি নিয়ে তার বেশ ক'টি গ্রন্থ রয়েছে। অধ্যাপনার পাশাপাশি ড. রেহমান নিয়মিত কলাম লেখেন। প্রায় প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে তার কলাম নিয়মিত ছাপা হয়। তার উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলাের মধ্যে রয়েছে, বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর, ইরাক যুদ্ধ পরবর্তী আন্তর্জাতিক রাজনীতি, নয়া বিশ্বব্যবস্থা ও সমকালীন আন্তর্জাতিক রাজনীতি, বিশ্ব রাজনীতির চালচিত্র, উপআঞ্চলিক জোট, ট্রানজিট ইস্যু ও গ্যাস রফতানি প্রসঙ্গ, বাংলাদেশ: রাষ্ট্র ও রাজনীতি, বাংলাদেশ রাজনীতির চার দশক, আন্তর্জাতিক রাজনীতি কোষ, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, সােভিয়েত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ইত্যাদি। ড. রেহমান তার গবেষণার কাজে পৃথিবীর অনেক দেশ সফর করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আইভিপি ফেললাে।