‘কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, বরং হয়ে ওঠে নারী,’ নারী সম্পর্কে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও স্মরণীয়তম এ-মন্তব্যটি সিমোন দ্য বোভোয়ারের, যিনি শুধু বিশশতকের নয়, চিরকালের শ্রেষ্ঠ নারীদের, অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ মানুষদের, একজন। ফরাসি ঔপন্যাসিক, দার্শনিক, ও প্রাবন্ধিক সিমোন দ্য বোভোয়ারের মহত্তম গ্রন্থ ল্য দ্যজিয়েম সেক্স, ইংরেজিতে যা বিশ্ববিখ্যাত দ্য সেকেন্ড সেক্স নামে, বাঙলায় দ্বিতীয় লিঙ্গ। নারীবাদের জননী মেরি ওলস্টোনক্র্যাফট ছিলেন নারীমুক্তির জোয়ার অফ আর্ক, আর সিমোন দ্য বোভোয়ার নারীবাদের আইনস্টাইন। সভ্যতাব্যাপী নারীর পরিস্থিতি সম্পর্কে এমন অসাধারণ গ্রন্থ আর লেখা হয়নি, সম্ভাবনাও নেই, অদ্বিতীয় এ-গ্রন্থ; প্রাজ্ঞ ও শিল্পিতার অনন্য নিদর্শন দ্য বোভোয়ারের দ্বিতীয় লিঙ্গ, যার পাতা থেকে বেরিয়ে এসেছে বিশশতকের দ্বিতীয়াংশের নারীবাদ, এবং পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতাকে বদলে দিয়েছে নানাভাবে। অবিবাহিত, সন্তানহীন, জা-পল সার্ত্রের আমরণ বান্ধবী হিসেবে কিংবদন্তি, যদিও অন্য প্রেমের কাছেও ধরা দিয়েছেন তিনি মাঝেমাঝে, দ্য বোভোয়ার গণ্য হয়ে থাকেন আধুনিক নারীবাদের জননীরূপে, যার কাছে ঋণী আমরা সবাই। তাঁর মহাগ্রন্থটি বাঙলায় অনুবাদ হয়নি, এ-দুরূহ জটিল বিস্ময়কর গ্রন্থের মুখোমুখি দাঁড়ানো কঠিন; এবং এ-কাজটি করেছেন হুমায়ুন আজাদ, যিনি তাঁর নারী নামকি এক সময় নিষিদ্ধ বইটির জন্যে হয়ে উঠেছেন বাঙলায় নারীবাদের প্রধান প্রবক্তা। হুমায়ুন আজাদ অসাধারণ গদ্যে প্রকাশ করেছেন মূল গ্রন্থের জ্ঞান ও সৌন্দর্য, যা বাঙলার পাঠকদের কাছে এক অলৌকিক বিস্ময় বলে মনে হবে।
সিমোন দ্য বেভোয়ার
হুমায়ুন আজাদ
হুমায়ুন আজাদ (২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ - ১১ আগস্ট ২০০৪; ১৪ বৈশাখ ১৩৫৪ - ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশোর সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার। তিনি বাংলাদেশের প্রধান প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান- ও সংস্কারবিরোধিতা, নিরাবরণ যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে নির্মম সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-র দশক থেকে ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের উপর কাজ করার জন্য জার্মান সরকারের নিকট একটি বৃত্তির আবেদন করেছিলেন। ২০০৪-এর ৭ আগস্ট জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ আগস্ট রাতে একটি পার্টি থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবাসস্থলে আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হুমায়ুন আজাদ। ১২ আগস্ট ফ্ল্যাটের নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।