বাংলা শিল্প-সাহিত্যের এক ক্রান্তিকাল ‘দিব্যপুরুষ’ উপন্যাসটির পটভূমি। ওই সময়ে উল্লেখযোগ্য কোনো সাহিত্য রচিত হয়নি। কারণ, শিল্প-সাধনার অনুকূল পরিবেশ তখন বাংলায় ছিল না; তুর্কি আক্রমণে তটস্থ ছিল বঙ্গ-বরেন্দ্রভূমির প্রতিটি জনপদ; হত্যা, ধর্ষণ আর লুটতরাজে জীবনধারণ হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ। থেমে ছিল সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশ।
লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বের শেষ পর্বে শাসনব্যবস্থা যখন ভেঙে পড়ে, সনাতন ব্রাহ্মণ্যবাদী শোষকদের নিগ্রহ ও সামন্ত-মহাসামন্তদের অত্যাচারে অন্ত্যজ শ্রেণি আর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রাণ বিষিয়ে ওঠে, তখন তাদের জীবন আরও বিপন্ন করে তোলে তুর্কি ও সুযোগসন্ধানী এ দেশীয় সৈন্যরা। সমূহ বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে তারা মুসলমান দিব্যপুরুষদের শরণাপন্ন হয়; দীক্ষা নেয় নতুন ধর্মে। কারণ, তুর্কিরা স্বধর্মীদের ওপর নির্যাতন করে না, বরং রক্ষা করে।
সেই অন্ধকার সময়ে কেন ঝরে পড়েছিল শিল্পসুষমা এবং রুদ্ধ ছিল জ্ঞানচর্চা ও শিল্প-সাহিত্যের দরজা—ইতিহাসের সরোবরে অবগাহন করে কথাশিল্পী পলাশ মজুমদার এই উপন্যাসে তা তুলে আনতে প্রয়াসী হয়েছেন। একই সমান্তরালে বিশাল ক্যানভাসে এঁকেছেন তৎকালীন সমাজের এক খণ্ডচিত্র।