"দ্বি-জাতি তত্বের সত্য-মিথ্যা"বইটির প্রথমের কিছু কথা:
মােহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্ব ভ্রান্ত ছিল। কতটা ভ্রান্ত? ততটাই ভ্রান্ত, যতটা সত্য ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বি-জাতি তত্ত্ব। হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে তালিকাবদ্ধ পার্থক্য অনেক ক্ষেত্রে, তালিকার বাইরেও ব্যবধান পাওয়া যাবে; কিন্তু হিন্দু ও মুসলমান যে দুটি আলাদা জাতি নয় তার রক্তাক্ত প্রমাণ রয়েছে আমাদের রাষ্ট্র ভাঙা গড়ার ইতিহাসে। দ্বি-জাতি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে জিন্নাহর নেতৃত্বে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়েছিল, প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তান; এমনি এমনি হয় নি, তার জন্য অনেক মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে, সীমান্তের উভয় পাড়ে। কিন্তু পাকিস্তান টিকলাে না। ভাঙলাে সে আরেক দ্বি-জাতি তত্ত্বের প্রচণ্ড আঘাতে। বাঙালী ও অবাঙালী যে এক নয়, তারা যে দুটি আলাদা জাতি সেই সত্যের প্রমাণ পাওয়া গেল পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশের রক্তাক্ত অভ্যুদয়ে। শেখ মুজিব এই অভ্যুদয়ের নায়ক ছিলেন। চৌদ্দের পরে যেমন পনের আসে; মােহাম্মদ আলী জিন্নাহর পরে তেমনি আসেন শেখ মুজিবুর রহমান, পাকিস্তানের পরে বাংলাদেশ । এক চৌদ্দই আগস্টে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়েছিল, আরেক পনেরই আগস্টে শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন। মাঝখানের ইতিহাস দ্বি-জাতি তত্ত্বের সত্য ও মিথ্যার ইতিহাস।
কিন্তু আমরা শেখ মুজিবের মৃত্যুর কথা নিয়ে আলােচনা করছি না। আপাততঃ নয়। আমরা লক্ষ্য করছি তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে দ্বিজাতি তত্ত্বের অবসান হয়েছে কি হয় নি। না, হয় নি। না, আমরা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলাের কথাই শুধু ভাবছি না, আরাে একটা ব্যাপক বিভাজনের কথা বলছি। বাংলাদেশে বাঙালীরা আজ স্পষ্টতঃই দু’টি জাতিতে বিভক্ত হয়ে রয়েছে- ধনী ও দরিদ্র। জাতি না বলে শ্ৰেণী বলতে পারেন। বলতে পারেন বাঙালী এখন ধনবান ও ধনহীন এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। কিন্তু শ্ৰেণী বলতে অনেকে এখন আপত্তি করেন দেখতে পাই, শ্রেণীর অস্তিত্বই অস্বীকার করতে চান লক্ষ্য করি। তাই আমরা শ্রেণী না বলে জাতিই
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (জন্ম: ২৩ জুন ১৯৩৬, বাড়ৈখালী, বিক্রমপুর) একজন প্রখ্যাত অধ্যাপক ও সাহিত্যিক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক সম্মান (১৯৫৫) ও স্নাতকোত্তর (১৯৫৬) ডিগ্রি অর্জন করেন এবং লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি (১৯৬৮) সম্পন্ন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রফেসর এমেরিটাস হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে প্রবন্ধ-গবেষণা, ছোটগল্প, উপন্যাস ও অনুবাদ, যেমন "অন্বৈষণ" (১৯৬৪), "শেষ নেই" (২০০৪), "এ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব" (১৯৭২) এবং "হোমারের ওডেসি" (১৯৯০)। তিনি লেখক সংঘ পুরস্কার (১৯৭৫), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৬), একুশে পদক (১৯৯৬) সহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।