কবিতার ধ্যানী পর্যটক রানা নাগ এমন কবিতা লিখেন না যে তা আদুরে ধ্বনিতে শ্রোতাদের জমায়েত করবে কিংবা বাচিক শিল্পীরা জমিয়ে আবৃত্তি করে হাততালি আদায় করে নেবে। জীবনানুভবে, মানবানুভবে রানার কবিতা মগ্ন উপলব্ধির ছায়াতল । শান্ত হয়ে বসে থেকে জীবনকে যে দেখা লাগে, ছোঁয়া লাগে— প্রত্যক্ষ সন্ধিৎসায় কবি সে কথাই প্রকাশ করেন। দৃষ্টি ও প্রজ্ঞায় তিনি একটি কেন্দ্রীয় চিন্তাকেই ধারণ করেন। সেই চিন্তার কেন্দ্রে আছে মানুষ। কবির জীবনের দিকে তাকালে স্পষ্ট বোঝা যায় যাপিতজীবনে, আপনময়তায় কিংবা কাব্যচর্চায় তিনি ধ্যানী ও অন্তর্মগ্ন। দেশ-কাল, সময়চিহ্নকে অতিক্রম করে তাঁর কবিতা ভাবায়। তাঁর কবিতা চঞ্চল করে না, স্পর্শ করে, ব্যথিত করে, সত্য ও শমে বসিয়ে রাখে। মানব সংসর্গ, ভিড়, ঘাম, ক্লান্তি, কর্মময় একাকিত্বের সত্যরূপটাই তিনি লেখেন। নাগরিক পরিতাপের শুষ্ক সত্যতাকে তাঁর কবিতা প্রশ্ন করে।
সংবরণ তো কবির ধর্ম নয় বরং অন্তর্দীপ্ততার পথে নেমে কবি আমাদের হাতে তুলে দেন পংক্তির নতুন কুঁড়ি। 'ধ্যান' নিছক শব্দ নয়; 'ধ্যান' সমসময়ে বেঁচে থাকা একজন আত্মমগ্ন, প্রতীক্ষাতুর বাঙ্ময়-মানুষের দার্শনিক উপলব্ধি। 'ধ্যান' বাঁচার ঐশ্বর্য। এবং এই কবিতার বইও তাই।
জীবনের গতানুগতিক একঘেয়ে বর্ণনা এই কাব্যগ্রন্থে নেই; নির্মাণের স্বাধীনতায় আছে বাঁচতে চাওয়ার প্রাঞ্জল অকুণ্ঠ উচ্চারণ। এই কবিতাগুলো হৃদয়কে, মননকে একটা উচ্চতায় রাখে। বারবার পাঠেও পুরনো হয়না 'ধ্যান'। সময়চিহ্নের সবটাকে ধারণ করে 'ধ্যান' কাব্যগ্রন্থটি অন্তর্জীবনের অতল গাঁথা।
রানা নাগ
জন্ম ২৮.০৮.১৯৭৯ নেত্রকোণা শহরে। আদি নিবাস কালিহাতি, টাঙ্গাইল। বেড়ে ওঠা মগড়া-সোমেশ^রীর তীরবর্তী জনপদে। উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ ময়মনসিংহ শহরে, আনন্দমোহন কলেজে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা পাঠ শেষে ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতকোত্তর করেছেন। ঢাকায় থিতু, পেশায় বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি ঔষধ কোম্পানির কর্মকর্তা। বিজ্ঞান-ধর্মতত্ত্ব-পুরাণ বিষয়ে আগ্রহী, নিভৃতচারী পাঠক ও বিজ্ঞানমনস্ক-যুক্তিবাদী হিসেবে বেশ সুনাম আছে।