সময় বড় সঙ্গীন। পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক। চারিদিকে আজ কেবল বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতার ছড়াছড়ি। কোথাও নেই একটু শান্তির সুবাতাস। সর্বত্রই আজ জুলুম-অত্যাচারের সয়লাব। ন্যায়-ইনসাফ ও মানবতা আজ ডুকরে কাঁদছে। বিশ্বমানবতার ভাগ্যাকাশে নেমে আসছে তিমির রাত্রি। মানুষ আজ বড্ড পেরেশান। কোথায় পাবে সে একটু পরিত্রাণ? নগ্নতা, অশ্লীলতা ও চারিত্রিক অবক্ষয় এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সমাজের সবচেয়ে ভালো মানুষটিও আজ নিজের ব্যাপারে সন্দিহান যে, কখন কোন গর্তে সে পা পিছলে পড়ে! উদাসীনরা তো আগে থেকেই উদাসীন, বর্তমানে তো সচেতনদেরও টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। আল্লাহর বিশেষ রহমত ও অনুগ্রহ না থাকলে নিজের চরিত্র রক্ষা ও হকের ওপর অবিচলতা এখন অসম্ভবপ্রায়।
সময়টা যে এখন বড় ফিতনার, এতে আজ কারও বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। ছোট থেকে বড়, কৃষক থেকে মজুর, সাধারণ থেকে আলিম—সবাই এখন নির্দ্বিধায়ই স্বীকার করে যে, সময়টা এখন ভয়ংকর ফিতনা-ফাসাদের। ব্যাপকভাবে এ স্বীকৃতি ও সবার মাঝে এ অনুভ‚তি থাকা সত্তে¡ও অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হলো, এ ব্যাপারে খুব কম মানুষই সতর্কতা অবলম্বন করতে চায়। ফিতনা থেকে কীভাবে বেঁচে থাকা যায়, জীবনকে কীভাবে চারিত্রিক অবক্ষয় ও সকল ফাসাদ থেকে মুক্ত রাখা যায়, সে ব্যাপারে মানুষ আজ বড় উদাসীন! আমাদের সমাজে সালাত ও সিয়ামের ব্যাপারে কিছুটা সচেতনতা থাকলেও ফিতনার ব্যাপারে মানুষের সচেতনতা একেবারেই বিরল। ব্যাপারটি যেমনই আশ্চর্যের, তেমনই আশঙ্কারও বটে।
ফিতনার ব্যাপারে মানুষের এ উদাসীনতা লক্ষ করেই যুগে যুগে মুহাদ্দিসিনে কিরাম সংকলন করেছেন এসংক্রান্ত অনেক গ্রন্থ। বড় বড় ও প্রসিদ্ধ হাদিসের গ্রন্থাবলিতে ফিতনা বিষয়ক অসংখ্য হাদিসের সমাহার থাকলেও উলামায়ে কিরাম এগুলোর পাশাপাশি এসংক্রান্ত সব হাদিস আলাদাভাবেও সংকলন করার প্রয়োজন অনুভব করেছেন। তন্মধ্য হতে ইমাম নুআইম বিন হাম্মাদ রহ. (মৃ. ২২৮ হি.) এর ‘কিতাবুল ফিতান’, ইমাম আবু আমর উসমান বিন সাইদ আদ-দানি রহ. (মৃ. ৪৪৪ হি.) এর ‘আস-সুনানুল ওয়ারিদা ফিল ফিতান’, ইমাম ইবনে কাসির রহ. (মৃ. ৭৭৪ হি.) এর ‘আন-নিহায়া ফিল-ফিতান ওয়াল-মালাহিম’ অন্যতম।
বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি ইমাম আবু আমর উসমান বিন সাইদ আদ দানি রহ. (মৃ. ৪৪৪ হি.) এর সংকলিত ‘আস-সুনানুল ওয়ারিদা ফিল ফিতান’ এর সরল অনুবাদ। হাদিসের সংখ্যাধিক্য, অধ্যায়ের বৈচিত্র্য, বিন্যাসের সৌন্দর্য ইত্যাদি বিবেচনায় গ্রন্থটি অত্যন্ত চমৎকার ও সর্বশ্রেণির পাঠকের জন্যই উপকারী।