ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ আজ থেকে দেড়শো বছর আগে ঢাকা শহর আধুনিক হয়ে উঠতে থাকে। তখন ঢাকা শহর ছিল খুবই ছোট, তবে, পূর্ববঙ্গের কেন্দ্র। ঐ সময় ঢাকায় মুদ্রণ যন্ত্র স্থাপন করা হয়। খবরের কাগজ ও বইপত্র প্রকাশিত হতে থাকে, পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রাহ্ম আন্দোলন শুরু হয়। বলা যেতে পারে সময়টা পূ্র্ববঙ্গের জাগরণের কাল। ঐ সময় জাগরণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ব্রজসুন্দর মিত্র, হরিশ্চন্দ্র মিত্র্র, কালী প্রসন্ন ঘোষ এবং নবকান্ত চট্রোপাধ্যায় । এই চারজনের জীবনকাহিনী নিয়ে প্রকাশিত হলো-ঢাকার সেইসব বিখ্যাত মানুষ।
ড. মুনতাসীর মামুন ও ঢাকার ইতিহাস চর্চা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ঢাকা বিষয়ক ড. মামুনের নতুন বই পাঠককে নিয়ে যাবে হারিয়ে যাওয়া ঢাকায়।
ভূমিকা প্রায় পঁচিশ বছর আগে ঢাকার তথা পূর্ববঙ্গের বিখ্যাত সাহিত্যিক কালীপ্রসন্ন ঘোষের একটি জীবনী লিখেছিলাম বাংলা একাডেমীর জীবনী গ্রন্থমালার জন্য । এর একদশক পর ঐ সিরিজের জন্য ঢাকার আরেকজন বিখ্যাত সাহিত্যিক হরিশ্চন্দ্র মিত্রের জীবনী রচনা করি। কয়েক বছর আগে মনে হলো, ঢাকার সেই সময়ের বিশিষ্টজন বা বিখ্যাত মানুষদের সংক্ষিপ্ত কিছু জীবনী লিখব যাতে স্পষ্ট হবে তারা ঢাকার আধুনিকায়নে কী ভূমিকা পালক করেছিলেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে , নবকান্ত চট্রোপাধ্যায় ও ব্রজসুন্দর মিত্রের ওপর দু’টি সংক্ষিপ্ত রচনা তৈরি করি। শেষোক্ত দু’জনের জীবনীর উপাদান নিতান্তই কম।
আমার গবেষণায় দেখেছি ঢাকা তথা ঊনিশ শতকের পূ্র্ববঙ্গের সমাজ সংস্কৃতিতে গতিশীলতা সৃষ্টি ও আধুনিকায়নে ব্রাহ্ম ধর্ম এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। সেইসব উদ্যমী মানুষরা কী ত্যাগ করেছিলেন , কী কষ্টই স্বীকার করেছিলেন তা অজানা। উল্লেখ বিশ শতকের শুরু থেকে মধ্যভাগ পর্যন্ত বাংলা/পশ্চিমবঙ্গে যারা সমাজ থেকে রাজনীতি,শিক্ষা থেকে সংস্কৃতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তারা জীবনের শুরুতে যুক্ত ছিলেন পূর্ববঙ্গ/ ঢাকা ব্রাহ্ম সমাজের সঙ্গে।
ব্রজসুন্দর ঢাকা/পূর্ববঙ্গের ব্রাহ্মসমাজের পতন করেছিলেন। কালীপ্রসন্ন ঘোর এস সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যৌবনে তিনি ব্রাহ্ম সমাজ পত্তনে ভূমিকা রেখেছিলেন। পরে অবশ্য সনাতন ধর্মে ফিরে যান। নবকান্ত চট্রোপাধ্যায় পুরো জীবনটাই নিবেদন করেছিলেন ব্রাহ্মসমাজের জন্য। হরিশ্চন্দ্র মিত্র ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বটে তবে ঢাকা প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং সে আমলের তুলনায় যথেষ্ট নিবারেল ছিলেন। এই চারজনের জীবনী পাঠ করলে এ বিষয়টি স্পষ্ট হবে যে, এরা কীভাবে তাদের কর্মের মাধ্যমে অবদান রেখেছিলেন।
চারটি জীবনীর বুনন চার রকম। এর কারণ, বাংলা একাডেমী জীবনী রচনার ক্ষেত্রে একটি কাঠামো দিয়েছিল। অন্যগুলোতে সেই কাঠামো নেই।
ঢাকার এই চার কৃতি পুরুষকে নিয়ে তাই প্রকাশিত হলো ঢাকার বিখ্যাত সেই সব মানুষ। সময় সুযো্গ হলে এ ধরনের আরো কিছু জীবনী লেখার ইচ্ছা আছে। মুনতাসীর মামুন ইতিহাস বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মুনতাসীর মামুনের জন্ম ১৯৫১ সালে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে এম. এ.. পিএইচ. ডি. ডিগ্রি লাভ করেছেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। লেখালেখি করছেন ১৯৬৩ সাল থেকে। ছাত্রজীবনে জড়িত ছিলেন ছাত্র-আন্দোলনে এবং ১৯৬৯ সাল থেকে এ-পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেছেন প্রতিটি সাংস্কৃতিক ও গণআন্দোলনে। স্বাধীন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত প্রথম ডাকসু নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন সম্পাদক। একই সময়ে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি সংসদের সভাপতি। তাঁর সম্পাদনায় প্রথম প্রকাশিত হয় ডাকসু’র মুখপত্র ছাত্রবার্তা। এছাড়াও বাংলাদেশ লেখক শিবির ও বাংলাদেশ লেখক ইউনিয়নের ছিলেন তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও যথাক্রমে প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সম্পাদক। ঢাকা নগর জাদুঘরের তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন তিনিও একজন । এছাড়াও তিনি জড়িত বিভিন্ন একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। বাংলাদেশে লেখালেখির জগতে মুনতাসীর মামুন একটি বিশিষ্ট নাম। সমসাময়িককালে তার মতাে পাঠক নন্দিত লেখক খুব কমই আছে। গল্প, কিশােরসাহিত্য, প্রবন্ধ, গবেষণা, চিত্রসমালােচনা, অনুবাদ ইত্যাদিতে তার স্বচ্ছন্দ বিচরণ ও সেই সাথে রাজনৈতিক ভাষ্যে অর্জন করেছেন বিশেষ খ্যাতি । উল্লিখিত প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৭০। বাংলা একাডেমী পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক পুরস্কার, ড. হিলালী স্বর্ণপদক পুরস্কার, প্রেসিডেন্ট পুরস্কার (১৯৬৩), মার্কেন্টাইল ব্যাংক স্বর্ণপদক ইত্যাদিতে তিনি সম্মানিত। স্ত্রী ফাতেমা মামুন ছিলেন একজন ব্যাংকার ।