ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ বাংলাদেশের রাজধানী নগরী ঢাকার ইতিহাসের ধাপগুলো খুবই চমকপ্রদ। আর এই অদল-বদলের ধারাবাহিকতায় এখানে বদলেছে সংস্কৃতি-সমাজ-সভ্যতা।
মোগল-পূর্ব ঢাকা বাহান্ন বাজার আর তিপ্পান্ন গলির জনপদ। ১৬১০ সালে সুবা বাংলার রাজধানী ঘোষিত ঢাকা প্রায় একশ’ বছর বছর গৌরবের সঙ্গে টিকে ছিল, সর্ব ভারতীয় জনগোষ্ঠীসহ ইরান, আফগান, তুর্কিরা পর্যন্ত ভাগ্য অন্বেষণে ঢাকায় ছুটে আসত। বুড়িগঙ্গা থেকে তুরাগ তীর পর্যন্ত বসবাসকারী নাগরিকের সংখ্যা পৌঁছেছিল ১০ লাখে। ১৭০০ সালে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নগরীর মধ্যে ঢাকার স্থান ছিল ১২তম।
১৭০৪ সালে ঢাকা থেকে রাজধানী মুর্শিদাবাদে চলে গেলে এই নগরী বিরাণ হতে থাকে, জনসংখ্যা কমতে কমতে ১৮২৪ সালে মাত্র ৬১ হাজারে নেমে আসে। ব্রিটিশ শাসনামলের শেষ ভাগে উনিশ শতকের প্রারম্ভে ঢাকার জনবসতি ফের বাড়তে শুরু করে। ১৯৪৭-এর দেশ ভাগের পর ঢাকা নগরী আধুনিক শহর হিসেবে ধীরলয়ে গড়তে শুরু করে। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ঢাকার ললাটে ফের এঁকে দেয় রাজতিলক।
রাজধানী ঢাকার পুরনো অংশসহ এই নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ক্ষয়িষ্ণু ঢাকাইয়া জনগোষ্ঠী। এখানে পরিবর্তন ঘটছে তীব্র গতিতে। আধুনিকতার প্রবল স্রোতে উল্টে-পাল্টে যাচ্ছে প্রতিক্ষণে, প্রতি মুহূর্তে।
দিনবদলের এই খরস্রোতে খড়কুটো ধরে আর কি বাঁচা সম্ভব ঢাকাইয়াদের? একদিন ঢাকাইয়াদের আঞ্চলিক ভাষা, পারিবারিক ও গোষ্ঠীবন্ধন, সমাজ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সবই ছিল। ছিল নিজস্ব রূপকথা, কিচ্ছা কাহিনি। পাখ-পাখালি, গাছ-গাছালি, কেল্লা-দেউড়ি, প্রাচীন ইমারত, মসজিদ-মন্দির আর ঝোপ-ঝাড়, জলাশয়ে মানুষের অন্ধ বিশ্বাসে বেঁচে ছিল ভূত-পেত্নী, জিন-পরী-দৈত্য-মানব, রাক্ষস-খোক্ষষ।
প্রিয় পাঠক, সেই হারানো ঢাকাকে জীবন্ত করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা, ঢাকার যত ভূত-পেত্নী গ্রন্থে ঢাকাইয়া লেখক আনিস আহামেদের।
আনিস আহমেদ
কবি আনিস আহমেদের জন্ম ১৯৫৬ সালের ৬ই মার্চ ঢাকায়। তার পৈত্রিক নিবাস কুমিল্লায়। তিনি ইংরেজি সাহিত্য ও ভাষা বিষয়ে ঢাকায় এবং ইংল্যান্ডে স্নাতক ও স্নাকোত্তর পর্যায়ে পড়া শােনা করেছেন। ঢাকার নটরডেম কলেজে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবনের সূচনা। পরে চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৮২ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত। ১৯৯৪ সালে বেতার সাংবাদিক হিসেবে যােগ দেন বিবিসি লন্ডনে এবং ২০০১ সাল থেকে একই পদে কর্মরত রয়েছেন ভয়েস অফ আমেরিকা ওয়াশিংটনে। ২০১০ সালে তিনি বেতার সম্প্রচারক হিসেবে ভয়েস অফ আমেরিকায়। স্বর্ণ পদক লাভ করেন। লন্ডনে কিছুদিন ড উইলিয়াম রাদিচের সঙ্গে স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজের বাংলা। বিভাগে, এবং একই প্রতিষ্ঠানের ভাষা শিক্ষা কেন্দ্রে বাংলা পড়িয়েছেন। খুব ছােটবেলা থেকে বেতার ও টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেছেন। আনিস আহমেদ স্বনামে ও বেনামে বাংলাদেশের এবং প্রবাসের পত্রপত্রিকায় অসংখ্য নিবন্ধ লিখেছেন।