ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ দু’দফায় তিনি ঢাকা ভিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেনা। প্রথমবার দেশ বিভাগের ঠিক প্রাক-মুহূর্ত থেকে ১৯৫১ সন অবধি, দ্বিতীয়বার বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি’-তে মিস এ জি স্টক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে তাঁর প্রথম পর্বের শিক্ষকতা জীবনের স্মৃতিচরণ করেছেন। কিন্তু একজন নিবেদিত-প্রাণ শিক্ষকের পেশা বা কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার বিবরণী মাত্র নয় এ বইটি। তৎকালীন পূর্ব বাঙলার সামাজিক-সাংস্কৃতিক চালচিত্র হিসেবেও বইটির একটি আলাদা মূল্য বা গুরুত্ব রয়েছে। একজন বিদেশিনী হিসেবে খানিকটা নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে কিন্তু গভীর আগ্রহ ও দরদ নিয়ে মিস স্টক এদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, সাধারণ জনজীবন, বিকাশমান শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণিটির আশা-আকাঙ্খা, মনস্তাত্বিক টানাপোড়েন ইত্যাদিকে বুঝবার চেষ্টা করেছেন। সদ্য-গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে বিশেষ করে শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রশ্নে শাসকগোষ্ঠীর মনোভাব, এ ব্যাপারে তরুণ সমাজের প্রতিক্রিয়া, আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্পর্কের স্বরূপ, সর্বোপরি ভাষার দাবিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট চাঞ্চল্য ও গণজাগরণ-নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে অগ্নিগর্ভ সে সময়ের যে অন্তরঙ্গ ও বিশদ বিবরণ লেখক দিয়েছেন কি বস্তুনিষ্ঠতায় কি ঐতিহাসিক মূল্যে তার সমকক্ষ রচনা বেশি পাওয়া যায় না। মিস স্টকের মূল ইংরেজি বইটি বেশ কিছুকাল আগেই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাভাষী পাঠকদের জন্য এর একটি বাংলা অনুবাদের প্রয়োজনীয়থা দীর্ঘদিন ধরেই অনুভূত হয়ে আসছিল। মোবাশ্বেরা খানমের শ্রমনিষ্ঠ, প্রাঞ্জল ও বিশ্বস্ত অনুবাদটি গ্রন্তাকারে প্রকাশ করতে পেরে আমরা তাই আনন্দিত। সবাইকে শুভেচ্ছা।