ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ মনসুর আল-হাল্লাজের জন্ম ৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে পারস্যের আল বাইজা নগরীর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত তূল অঞ্চলে। তার পিতার নাম আবুল মনসুর আর হাল্লাজ হচ্ছে তার উপাধী যা পিতার নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মনসুর আল হাল্লাজ। বাইজা ছিল আরব শাসিত নগরী। হাল্লাজ ছিলেন সম্ভবত ইরানি, আরব নন। হাল্লাজের পিতা সেখানে রেশম শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি হাল্লাজকে নিয়ে যান আরবদের প্রতিষ্ঠিত টেক্সটাইল নগরী ওয়াসিত-এ। ওয়াসিতের বেশিরভাগ মানুষ ছিল সুন্নী ও হানবলি সম্প্রদায়ভুক্ত, শিয়ারা ছিল সেখানে সংখ্যালঘু। ওয়াসিতের একটি স্কুলে কোরান পড়ে হাল্লাজ মাত্র বারো বছর বয়সে হাফেজ হন। কোরানকে তিনি আত্মীকৃত করেন সুফিতাত্ত্বিক ও মরমী উপলব্ধির দ্বারা। আর এ থেকেই শুরু হয় তার সুফি ও মরমী প্রেমের রহস্যানুসন্ধান। পরমকে কাছে পাওয়ার বিশেষ পথ। এরপর হাল্লাজ গুরুর সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। তার সুফি ও মরমী সাধনা চলতে থাকে একাকীত্বের পথ ধরে। একদিন নিগুঢ় তত্ত্বসাধনায় মগ্ন ছিলেন হাল্লাজ। অদৃশ্য হতে প্রকম্পিত আওয়াজের তার শরীর শিহরে উঠল। কিন্তু কোথাও কাউকে দেখা গেল না। তিনি খেয়াল করলেন এ শব্দ বাহিরের কোনো শব্দ নয়-নিজের ভেতর থেকে কে যেন আলিঙ্গন করছে-হাল্লাজ! তুমি তোমাকে জানো কি? হাল্লাজ কয়েক মূহূর্ত হতভম্ব হয়ে গিয়েছেল। তারপর খেয়াল করল-ভেতরের ব্যক্তিটি আর কেউ নন স্বয়ং পরম সত্তা তার উপস্থিতির সাক্ষ্য দিচ্ছেন। হাল্লাজ আবার সাধনায় মনোনিবেশ করলেন। এভাবেই সাধানায় তার সর্বোচ্চ সুফিতাত্বিক উক্তি আনা-আলা হক্ক অর্থাৎ আমিই একমাত্র সত্য পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছিল। তাই হুসাইন বিন মনসুর হাল্লাজ (রা.)-কে জানতে হলে সুফিতত্ত্বকে জানতে হবে। জানতে হবে এমন সব তাত্ত্বিকভেদ ও দর্শন যা এ বইয়ে আলোচিত হয়েছে। পাঠক-ভক্তগণ সেগুলো অধ্যায়নের মাধ্যমে প্রকৃত জ্ঞান লাভে সক্ষম হবে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।