কোমর বা কাঁখ পর্যন্ত জলে ডোবা এই গাছগুলো, হিজল ও তমাল তাদের ছড়ানো ডালপালা বিশেষ করে শুকনো হওয়া ডালগুলোর এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য তৈরি হয়েছে রাতারগুলে। শৈশবে দেখেছি ভরাবর্ষার দিনগুলোয় মামাবাড়ির গ্রামীণ বনের গাছপালাগুলো এভাবেই ডুবে যেত বন্যাজলে। পরিবেশ ও দৃশ্য আমার অচেনা নয় একেবারে। হয়তো এতটা গভীরতা নয়, সে বৃক্ষাবলির ভেতর হিজল, তমালও ছিল, তবে রাতারগুল নিরবচ্ছিন্ন জলসাম্রাজ্য আর ঘন গাছপালা নিয়ে আলাদা সৌন্দর্যের তো বটেই। তবে, সৈয়দ মুজতবা আলীর কথা ধার নিয়েই বলি, এ নিয়ে গুলবাজদের এত গুল শুনেছি, তারা কখনও কখনও গুল মোহাম্মদ বা গুলজারি লাল নন্দও হয়েছে, কিংবা কখনও বিদেশি পর্যটকদের কাছে প্রতিভাত হয়েছে ডিউক অব গুলস্টার কিংবা দ্য গুল হিসেবে, কিন্তু তারা যে গুলমগীর হতে পারেনি তা নিয়ে আমি নিঃসংশয়। তারা গুলমহলও বানাতে পারেনি, কেননা রাতারগুল পুনরাবৃত্তিমূলক, এখানে নব নব সৌন্দর্যের উন্মোচন নেই। জানিনা ৯৭২ একরের দূর দূর প্রান্তে আর কী কী রহস্য আছে তবে এখানকার মাঝিরা পর্যটকদের একটি নির্দিষ্ট জলবেষ্টিত এলাকার ভেতরেই ঘোরায়, ফটো স্টুডিওগুলো এখানেই, বাঁদরের নাচানাচি আর সংগীতসাধনা এই সীমিত অঞ্চলের ভেতরে কেবলি ঘুরপাক খায়। মাঝি জানাল বছরব্যাপী রাতারগুলে পানি থাকে। শুকনো মৌসুমে অবশ্য কিছু জায়গা শুকিয়ে যায়, তখন নেমে হাঁটাচলাও করা যায়।
কামরুল হাসান
সব্যসাচী লেখক কবি কামরুল হাসান। জন্ম ২০ মার্চ ১৯৬৪, দরিয়াপাড়, কক্সবাজার শহর। পিতা প্রয়াত ডা. নুরুল হক ও মাতা রোকেয়া বেগম। শৈশব থেকে খেলাধুলা, চিত্রকলা, অভিনয়সহ শিল্প-সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যমের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তিনি একইসঙ্গে কবি, শেকড়সন্ধানী লেখক, গবেষক, নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা ও সংগঠক। রচিত ও নির্দেশিত নাটকসমূহ : খুকুড়ি, দ্রæহী পল্লান, কালাচাঁনের দোয়ারী, স্বপ্নসুখ। এই কবি মৈন কুমারী ও তমাটে কিশোর এবং জন্মজ্ঞাতি নামক ২টি কালজয়ী নাটক রচনা করেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থসমূহ : নাফকাব্য, রাখাইন কাব্যিয়া। সম্পাদিত গ্রন্থসমূহ : উর্মি, সৃষ্টি সৌন্দর্যের আরেক রূপ, আমরাও পারি, চিহ্ন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় স্মারক ২০১০, বিজয় স্মারক ২০১১, বিজয় স্মারক ২০১২, বিজয় স্মারক ২০১৪ প্রভৃতি। এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলা পিডিয়ায় ‘রাখাইন’ প্রকাশ। অর্ধশতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছেন। পুরস্কার : কবি কোলকাতা সিটি করপোরেশন প্রদত্ত ‘সংস্কৃতি ও সম্প্রীতি ১৯৯৪’ পুরস্কার, ‘সাগরমুনি’ পুরস্কার ২০১০, বায়তুশ শরফ ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক ২০১০, ২০১১ সালে ‘শব্দায়ন প্রদত্ত বর্ষসেরা কবি ও কবিতা পুরস্কার ১৪১৭’, কবি নুরুল হুদা সম্মাননা ২০১২, কক্সবাজার প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ প্রদত্ত ‘জ্ঞানতাপস’ সম্মাননা ২০১২, লোকসংস্কৃতি বিষয়ে শিল্পকলা একাডেমী সম্মাননা পুরস্কার ২০১৫ লাভ করেন। ওয়াইপো ও এশিয়াটিক সোসাইটি পরিচালিত গবেষণা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।