দেবী
#রিভিউ বইঃ দেবী লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ প্রকাশকালঃ ১৯৮৫ প্রকাশকঃ অবসর হুটহাট করেই মাঝরাতে রানুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। তখন সে ছাদে কারো হেটে যাওয়ার শব্দ পায়। একই মুহূর্তে খুবই মিষ্টি একটা গন্ধও পায়। কখনো কখনো ঘরের ভেতর নুপুরের ঝুমঝুম শব্দ শুনতে পায়, মনে হয় নুপুর পায়ে কেউ হেটে যাচ্ছে। অথচ রানুর জীবনটা এমন ছিলনা। ১২ বছর বয়সে তার জীবনে ভয়ঙ্কর একটা ঘটনা ঘটে। আর ঐ ঘটনার পর থেকেই রানু অনেক কিছু দেখতে পায়, শুনতে পায়। অনেক কিছুই আগে থেকে বলে দিতে পারে। সে যা যা বলে সবই সত্যি হয়। রানুর স্বামী আনিস রানুর এই ব্যাপারগুলোর সাথে মানিয়ে উঠতে পারেননা। তিনি চান রানুর ভালো চিকিৎসা হোক। ভালো চিকিৎসা হলে সে অবশ্যই সেরে উঠবে। সে সিদ্ধান্ত নেয় মিসির আলী সাহেবকে একবার দেখাবে। তার অফিসের এক কলিগের কাছে মিসির আলীর নাম শুনেছেন। তিনি নাকি অদ্ভুত টাইপের এক লোক। ইউনিভার্সিটিতে পড়ান, আর অবসর সময়ে জাগতিক রহস্য নিয়ে কাজ করেন। যেসব রহস্যের কোনো ব্যাখ্যা নেই, সেগুলো তিনি যুক্তি দিয়ে সমাধান করেন। মিসির আলীর পরিচয় নতুন করে দেবার মত কিছু নেই। তিনি তার কর্মের দ্বারাই অধিক পরিচিত। তিনি রহস্য সমাধান করতে ভালোবাসেন, তবে তাকে ঠিক গোয়েন্দা বলা চলেনা। কারণ তার সমাধানকৃত রহস্যগুলাও অদ্ভুত। যেসব ঘটনা আপাতদৃষ্টিতে আমরা অলৌকিক বা ভৌতিক বলে চালিয়ে দিই, সেসব ঘটনার যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে পারেন তিনি। তার মতে, কোনোকিছুই ব্যাখ্যার উর্ধে নয়। তবে উনারও কিছু অমীমাংসিত রহস্য হয়েছে, যেগুলো কোনো একদিন উনি সমাধান করবেন বলে ফেলে রেখেছেন। এই গল্পে নিলু চরিত্রটার খুব ভালো গুরুত্ব রয়েছে। রানুর পাশাপাশি তাকে নিয়েও অনেকটা গল্প এগিয়েছে। আমি অনেক আগে একবার দেবী পড়েছিলাম। তখন বয়স অনেক কম ছিল। অনেক ভালো লেগেছিল। মাসুদ রানা আর তিনগোয়েন্দার বাইরে নতুন পছন্দ হয়ে উঠেছিল মিসির আলী। তবে গ্রুপে এই বইয়ের অনেক রিভিউ পড়েছি যেখানে পাঠক লিখেছেন তিনি ঠিকমত বুঝতে পারেননি। গল্পের এন্ডিং অনেকেরই ভাল্লাগেনি। অনেকেই বলতো এটা নাকি হুমায়ূন আহমেদের বাজে স্ববাব। তিনি তার কোনো গল্পেরই নাকি এন্ডিং ঠিকঠাক লিখেননা। একটা ধোয়াশা নাকি রেখে দেন। হতে পারে এটা তার বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এটাও ভাবা উচিৎ, আপনার কাছে যেটা ধোয়াশা মনে হয়েছে সেটা অন্যকারো ভালোও লাগতে পারে। তাদের কাছে এই ধোয়াশাটাই হয়তো ভাল্লাগে। কেন ভাল্লাগে? এমন হতে পারে তারা এটা নিয়ে চিন্তা করার খোরাক পায়। অথবা এমন হতে পারে লেখক চান তার পাঠকেরা মিসির আলীর মত একটু ভাবুক। এমন চাওয়ায় দোষের কিছু কিন্তু নেই। অনেকেই বলেছেন দেবী বুঝতে হলে নিশীথিনী পড়তেই হবে, না পড়কে বোঝা যাবেনা। আমার কাছে কথাটা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কারণ, সব রহস্যেরই যে সমাধান হতেই হবে এমন কোনো কারণ নেই। থাকুকনা কিছু রহস্য তাদের মতন। রানুর চিকিৎসা বা ওর রহস্যটা নিয়ে মিসির আলী কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তথ্যের খোঁজে উনি অনেক জায়গায় যাচ্ছেন, রানুর ছোটবেলার আবাসস্থলেও যাচ্ছেন। যাবেন তার সাথে?