মানুষের সমাজে যখন থেকে দাসপ্রথা চালু হয়েছে তখন থেকেই দাসত্বে নিপতিত মানুষেরা নানাভাবে বিদ্রোহ করেছে। সেই প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত প্রাচীন গ্রীস, রোম, চীন, মিশর থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে বিদ্রোহ হয়েছে এজন্য যে, দাসত্বকে তারা মেনে নিতে পারেনি। দাসদের মানুষের মর্যাদা ছিল না। দাসত্ব ছিল অমানবিক, নিষ্ঠুর ও নিপীড়নমূলক। তাই তারা বিদ্রোহী হয়ে সর্বশক্তি দিয়ে অসুর শক্তির সাথে লড়াই করেছে। জীবন দিয়েছে। প্রাচীন গ্রীসে মেসেনিয়ান ও প্রাচীন রোমে সিসিলিয়ান দাসবিদ্রোহ প্রথম চমকে দিয়েছিল সবাইকে। দাস মানুষেরা দাসপ্রথার নিগড় থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল। এই বিদ্রোহের সিরিজে রোমে স্পার্টাকাসের নেতৃত্বে দাসবিদ্রোহ ইতিহাসে চমক সৃষ্টিকারী ঘটনা। প্রাচীন চীনে ‘লাল ভ্রুর বিদ্রোহ’ ও ‘হলুদ পট্টির বিদ্রোহ’ দাস ও নিপীড়িত মানুষের সাহসিকতায় ভরপুর। মধ্যযুগে মধ্যপ্রাচ্যে জাঞ্জ দাসদের বিদ্রোহ আরেক অসম সাহসী লড়াই। এই ধারাবাহিকতায় আমেরিকা মহাদেশে নিগ্রো দাসদের অসংখ্য বিদ্রোহ এরই সাক্ষ্য বহন করে। হাজারো সাহসী বিদ্রোহী দাসের রক্তে ভেজা এই কাহিনী লেখক তার অনবদ্য এই রচনায় পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন। বিদ্রোহের এই কাহিনী যুগে যুগে যেমন পৃথিবীতে নিপীড়িত মানুষকে বিদ্রোহমনস্ক হতে অনুপ্রাণিত করেছে, তেমনি বর্তমান ও ভবিষ্যতের মানুষকেও উজ্জীবিত করবে নিশ্চয়।
সিরাজ উদ্দিন সাথী
সিরাজ উদ্দিন সাথী ১৯৫৫ সালে তদানীন্তন ঢাকা জেলার (বর্তমান নরসিংদী জেলা) পলাশে জন্মগ্রহণ করেন । শৈশব-কৈশাের কেটেছে বর্তমান পলাশ উপজেলায়—এক অপরূপ প্রাকৃতিক নৈসর্গের মাঝে। প্রকৃতি আর মানুষকে নিয়ে তখন থেকে তার অপার আগ্রহ। ঊনসত্তরের উত্তাল ছাত্র আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানে ছিল তার সক্রিয় অংশগ্রহণ । অবিভক্ত কালীগঞ্জ থানায় স্কুল পর্যায়ের ছাত্রদের নেতৃত্ব দেন ঐ সময় । একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন অসীম সাহসিকতার সাথে । দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রজীবন কেটেছে চট্টগ্রামে । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স)সহ এমএ, এলএলবি এবং যুক্তরাজ্যের ওয়েলস্ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনের শুরুতে কলেজে অর্থনীতির শিক্ষকতা করেছেন । উকিল হতে চেয়েছিলেন, পরে হয়েছেন চাকুরীজীবী । ঘুরেছেন পৃথিবীর অনেক দেশ, দেখেছেন প্রাচীন মানুষের হারিয়ে যাওয়া অনেক সভ্যতা। মানবসভ্যতার আদি এসব নিদর্শন আদিম মানুষ সম্পর্কে তাঁর জানার আগ্রহকে বাড়িয়েছে অনেকগুণ । শান্তিতে নােবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পাদিত এবং গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃক ১৯৮১ সালে প্রকাশিত বেলতৈল গ্রামের জরিমন ও অন্যান্য গ্রন্থের অন্যতম সহ-লেখক তিনি । এছাড়া ১৯৯২ সালে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদী ও ২০১১ সালে প্রকাশিত পবিত্র মক্কা নগরীর ইতিকথা এবং দাস প্রথা তাঁর লেখা অপর তিনটি গ্রন্থ।