ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট
বইঃ ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট লেখকঃ ফিয়োডোর ডস্টয়েভস্কি (১৮২২-১৮৮১) রিভিউঃ বইটির মুখ্য চরিত্রে ছিলো, নিষ্ঠাবান আইনের ছাত্র রোডিয়ন। সে ছিল হতদরিদ্র অথচ সৎ, চরিত্রবান আর দয়ালু ছেলে। অর্থের অভাব থাকলেও আত্মমর্যাদাবোধের প্রাচুর্য ছিল তার। কিন্তু জীবনের রূঢ় বাস্তবতা তাকে বেআইনের পথে হাঁটতে বাধ্য করেছিল। অর্থের অভাবে বাড়িভাড়া, খাবার দাবার আর পড়ালেখা; সবই শিকেয় উঠেছিল। অথচ মাত্র তিন হাজার রুবল্ হলেই ঘুরে যেতো তার জীবনের মোড়। গ্র্যাজুয়েশনটা কমপ্লিট করতে পারলে সে নিজেই দেশের জন্য সম্পদে পরিণত হতো। কিন্তু কে দেবে তার এ অর্থের যোগান? যেখানে মাত্র দেড় রুবলের জন্য তার সর্বশেষ সম্বল ঘড়িটাও বন্ধক রাখতে হয়েছে মহাজনী বুড়ি, 'অ্যালিওনা আইভানোভনা'র কাছে। ঘটনাচক্রে একদিন রোডিয়নের দেখা হয়, রিটায়ার্ড সরকারি কর্মচারী 'মারমেলাডভের সাথে। প্রথমা স্ত্রীর মৃত্যুর পর সে তিন বাচ্চাসহ এক বিধবাকে বিয়ে করে। কিন্তু তার পক্ষে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে। তার প্রথমা স্ত্রীর ঘরে একটি মেয়ে ছিল, সোনিয়া। সৎমায়ের পিড়াপিড়িতে মদ্যপ বাবার সংসার চালাতে কচি বয়সেই সে নেমে পড়ে দেহ ব্যবসায়। কিন্তু সে টাকা চুরি করে তার মদ্যপ বাবা নেশা করে বেড়াতো। নিজের হীন অবস্থা সত্ত্বেও লোকটির সংসারিক অবস্থা দেখে রোডিয়ন খুব মর্মাহত হলো। ঘড়ি বন্ধকের শেষ যে কয়েক কোপেক তার পকেটে অবশিষ্ট ছিল, তাও তার পরিবারকে দিয়ে দিলো। এদিকে একটি নষ্ট স্বপ্ন মাসখানেক ধরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আগে একসময় এসব স্বপ্নকে পাত্তাই দিতো না রোডিয়ন। কিন্তু এখন! এখন তার দরকার তিন হাজার রুবল। বিধবা আইভানোভনা যেহেতু সবাইকে সুদে ঋণ দেয়, তার কাছে নিশ্চয়ই অনেক রুবল পাওয়া যাবে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। ঝোঁকের মাথায় খুন করে বসে বুড়িকে! সাথে তার বোনকেও। বুড়ির কিছু টাকা আর গয়নাগাটি নিয়ে ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে যায় সে। বিপত্তি বাধে এরপরই। অনুতাপের জ্বরে সে পাগলপ্রায়! কোনভাবেই নিজেকে সামলাতে না পেরে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে রোডিয়ন। এ সময় রোডিয়নকে দেখে রেখেছিল তার পরম বন্ধু রাজুমিখিন। এরই মাঝে রোডিয়নের জন্য তার মা ৩৫ রুবল পাঠায়। কিছুটা সুস্থ হলেও রোডিয়নের পাগলাটে স্বভাব বাড়তে থাকলো। পুলিশের সন্দেহের তির তার দিকে। তার ইচ্ছে করে, চিৎকার করে পুলিশকে সব বলে দেয়, এবং আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু সাহসে কুলোয় না। এরি মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় সোনিয়ার বাবা মারা যায়। রোডিয়নের কাছে তার মায়ের পাঠানো ৩৫ রুবল থেকে ২৫ রুবল অবশিষ্ট ছিল। সে ওটা সোনিয়ার সৎমা'কে দিয়ে দেয়। রোডিয়ানের এ চরিত্র সোনিয়াকে বেশ আকৃষ্ট করে। রোডিয়নেরও তার প্রতি গোপন অনুরাগ ছিল। এদিকে রোডিয়নে মা আর ছোট বোন মফস্সল থেকে শহরে এসেছে। লুজিন নামক এক ধনী লোকের সাথে তার বোন দুনিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে। লুনিজ হচ্ছে, সিদ্রিগয়লভের স্ত্রীর কোন আত্মীয়। আর সিদ্রিগ হচ্ছে সে; যার বাচ্চাদের দুনিয়া পড়াতো। কিন্তু লম্পট সিদ্রিগ দুনিয়ার সাথে ফষ্টিনষ্টি করতে চাইলে দুনিয়া তার স্ত্রীর কাছে বিচার দেয়। সিদ্রিগের স্ত্রী উল্টো দুনিয়াকে দোষারোপ করে তাড়িয়ে দেয়। পরে অবশ্য সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে আত্মীয়স্বজনদের কাছে দুনিয়ার সুনাম করে। এভাবেই লুজিন সুন্দরি ও চরিত্রবান দুনিয়া সম্পর্কে জানতে পারে এবং সুবিধা বুঝে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু লুজিন মোটেও ভালো লোক নয়। লুজিনের কিপটে স্বভাবের কারণে রোডিয়ন এ বিয়েতে অমত করে। সে চাইতো তার বন্ধু রাজু দুনিয়াকে বিয়ে করুক এবং তাদের দেখাশোনা করুক। সে রাজুকে এটা বলেছেও। এভাবে ঘটনা প্রবাহ এগিয়ে চলে। অবশেষে সোনিয়ার অনুপ্রেরণায় রোডিয়ন মনস্থির করে যে, সে দোষ স্বীকার করে প্রায়শ্চিত্ত করবে। কিন্তু থানায় গিয়ে জানতে পারে, কোলিনে অর্থাৎ সেই রং মিস্ত্রী; যাকে পুলিশ সন্দেহবশত গ্রেপ্তার করেছিল, সে খুনের দায় স্বীকার করে নিয়েছে। কেন করেছে এর উত্তর কারো জানা নেই। রোডিয়নের অনুতাপের আগুন ধপ করে নিভে গেলো। কিন্তু থানা থেকে বের হয়ে যেতেই সামনে পড়লো সোনিয়া। সে বাইবেল হাতে দাঁড়িয়ে। তার ভেতরকার পবিত্র সত্তা রোডিয়নের হৃদয়কে আবার আলোকিত করলো। সে আবার থানার ফিরে গিয়ে সব স্বীকার করে আত্মসমর্পন করলো। এমন স্বীকারোক্তির জন্য বিচারক তাকে মাত্র ৮ বছরের জন্য সাইবেরিয়ায় নির্বাসন দিলো। তার সঙ্গে স্বেচ্ছায় আরেকজন মানুষ নির্বাসনে গেলো। সে হলো, সোনিয়া। প্রতিক্রিয়া:-লেখক অসাধারণ চিত্রকল্প তৈরি করতে পারেন। কখনো মনে হচ্ছিল, লেখক নিজেই রোডিয়ন চরিত্রের মধ্যে ঢুকে গেছেন। আবার কখনো মনে হচ্ছিল না, আমিই রোডিয়ন। শেষে 'ভ' যুক্ত বিরক্তিকর নামগুলো ব্যতীত পুরো গল্পটাই যেন চোখের সামনে ভাসছে। কী সুন্দর বর্ণনাশৈলি। মন্তব্য:-তৎকালীন রাশিয়ার পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার অনন্য উদাহরণ বইটি। চট করে পড়ে ফেলতে পারেন, ঠকবেন না। রেটিং:৯/১০ -