মীর মশাররফ হোসেন বাংলা সাহিত্যে মুসলিম ধারার পথিকৃৎদের একজন। একাধারে তিনি উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ সহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় কালজয়ী কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। শিশু সাহিত্যে তাঁর প্রতিভা আর দরদের উত্তম উদাহরণ ছোটদের মহানবি।
ক্লাসিকাল সাহিত্যের অন্যরকম একটি সৌন্দর্য ও স্বাদ আছে। সেই স্বাদ অক্ষুণ্ন রাখতে সময়ের স্রোতে ভাষা, শব্দ আর বানানের বিধি পরিবর্তন হলেও তা অপরিবর্তনীয় রূপেই মুদ্রণ করতে হয়। কিন্তু বইটি শিশু-কিশোরদের। তারা সবে মাত্র ভাষা, শব্দ আর বানানের পাঠ শুরু করেছে। তাদের কাছে শতাব্দী পুরোনো শব্দ ও বানান অস্বস্তিকর ঠেকতে পারে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই মীর মশাররফ হোসেনের এ বইয়ে কিছু বানান আমরা পরিমার্জন করেছি। আর দুয়েকটি জায়গায় তথ্যগত বিভ্রাটও শুধরাতে হয়েছে; তবে তা একেবারে হাতেগোনা দুয়েকটি। পাশাপাশি ছোটদের পাঠের সুবিধার্থে উপশিরোনাম জুড়ে দেওয়ার দায়টাও আমাদের। এটুকু পরিমার্জন আশা করি ইতিবাচক গণ্য হবে।
শিশু-কিশোরদের মানস গঠনে এ বই খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। বইটি এত বেশি দরদ, ভালোবাসা আর মজা করে লেখা-- বিমুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।
মীর মশাররফ হোসেন
মীর মশাররফ হোসেন (নভেম্বর ১৩, ১৮৪৭ - ১৯১২) ছিলেন একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক যিনি ঊনবিংশ শতাব্দাীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা গদ্যের ঊণ্মেষকালে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বিষাদ সিন্ধু নামক ঐতিহাসিক রচনার জন্য সপুরিচিত ও সাধারণ্যে জনপ্রিয়। তিনি তৎকালীন বৃটিশ ভারতে (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর লেখাপড়ার জীবন কাটে প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে ফরিদপুরের পদমদীতে ও শেষে কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় ফরিদপুরের নবাব এস্টেটে চাকরি করে। তিনি কিছুকাল কলকাতায় বসবাস করেন। মীর মশাররফ হোসেন তাঁর বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে উপন্যাস, নাটক, প্রহসন, কাব্য ও প্রবন্ধ রচনা করে আধুনিক যুগে মুসলিম রচিত বাংলা সাহিত্যে সমৃদ্ধ ধারার প্রবর্তন করেন। সাহিত্যরস সমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনায় তিনি বিশেষ কৃতিত্ব দেখান। কারবালার বিষাদময় ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস "বিষাদসিন্ধু" তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা। তাঁর সৃষ্টিকর্ম বাংলার মুসলমান সমাজে আধুনিক সাহিত্য ধারার সূচনা করে। মীর মশাররফ হোসেন খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর একটি ছোট গ্রাম লাহিনিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তার জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির পদমদীতে অতিবাহিত করেন। তবে তার জন্ম তারিখ ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর বলে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়। কিন্তু কিছু গবেষক তার জন্ম তারিখ ১৮৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর বলে দাবী করেন। তিনি মীর মোয়াজ্জেম হোসেন (মুসলিম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি) এবং দৌলতুন্নেছার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র আঠার বছরে বয়সে তারঁ পিতৃবন্ধুর কন্যা আজিজুন্নেসার সাথে বিয়ে হয়। ১৯১২ সালে দেলদুয়ার এস্টেটে ম্যানেজার থাকাকালেই মীর মশাররফ হোসেন পরলোকগমন করেন। তাকে পদমদীতে দাফন করা হয়।