কাজী নজরুল ইসলাম নিজেই ছিলেন এক চিরশিশু। তিনি চেয়েছেন কিশোরবাহিনীর শক্তিকে গঠনাত্মক ও কল্যাণের কাজে নিয়োজিত করতে। জাতিগঠনে, দেশগঠনে কল্যাণকর সমাজব্যবস্থা গঠনে শিশুর মনের মুক্তি তিনি খুঁজেছেন। শিশুর মনকে সংক্রামিত করতে চেয়েছেন ভবিষ্যকালের নির্ভীক, সত্যবাদী, আদর্শনিষ্ঠ, স্বাস্থ্যবান, সংস্কৃতিমান হৃদয়বত্তা দিয়ে। কিশোর গল্প ও নাটকগুলোতে নজরুলের যা বৈশিষ্ট্য, সেগুলোর সবকিছুই উপস্থিত আছে।
নজরুলের অজস্র সাহিত্যকর্ম থেকে শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প, নাটিকা খুঁজে বের করা অনেক দুরূহ কাজ। যখন যিনি এসে তার কাছে লেখা চাইতেন, তিনি তখনই তাদের তা লিখে দিতেন। কাকে কোন লেখা দিয়েছেন অনেক সময়ই তার কোনো খোঁজখবর রাখতেন না। আর এ কারণেই আজও তার অনেক সৃষ্টিকর্মের হদিস পাওয়া যায়নি।
এখন পর্যন্ত নজরুলের যেসব গল্প, নাটকের হদিস পাওয়া গেছে, সেগুলোর মধ্য থেকে একদম কিশোর উপযোগী লেখাগুলো নিয়েই প্রকাশিত এই ছোটদের গল্প ও নাটকর সংকলন। সংকলনটিতে একই সঙ্গে নজরুলের তারুণ্যের দ্রোহ, সাম্য, মানবতা, ন্যায়বোধ ও শিশু-কিশোর মনের বিচিত্র কল্পনাপ্রতিভার স্বাক্ষর রয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলাম
বাংলাদেশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে (২৪ মে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসােল মহকুমার। চুরুলিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কাজী ফকির আহমদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি পিতৃহীন হন। এ সময় তিনি জীবিকার প্রয়ােজনে লেটো’র দলে যােগ দেন কিন্তু বেশিদিন তিনি এ দলে থাকেননি। দশ বছর বয়সে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করার পর তিনি গ্রামের মক্তবে কিছুদিন শিক্ষকতার চাকরি করেন। তারপর তিনি চলে আসেন নতুন কর্মস্থল আসানসােল। সেখানে থানার দারােগা জনাব রফিজউদ্দিনের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তার সঙ্গে চলে আসেন দারােগার। নিজগ্রাম ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার দরিরামপুরে দারােগা সাহেব তাঁকে ভর্তি করে দেন ত্রিশালের দরিরামপুর হাই স্কুলে। এখানে প্রায় এক বছর। পড়ালেখার পর নজরুল পুনরায় চলে যান চুরুলিয়ায় ।। ভর্তি হন রানীগঞ্জের শিয়ারসােল রাজ স্কুলে। এখানে। তিনি পড়াশােনা করেন তিন বছর। এ সময় প্রথম মহাযুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। নজরুল তখন প্রবেশিকা। পরীক্ষা দেবার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা শেষ হতেই তিনি যুদ্ধে যােগ দিলেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে যােগ দেন ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনে। তিন বছর তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকেন। তার চাকরিজীবন ছিল মূলত করাচিতে এ সময় তাকে পেশােয়ার, নওশেরা, বেলুচিস্তান পর্যন্ত যেতে হয়েছে। সৈনিকজীবনে অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি প্রথমে হাবিলদার ও পরে ব্যাটেলিয়ান কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পদে উন্নীত হন। করাচির সৈনিক জীবনকে বলা হয় তার প্রতিভার সাজঘর।