আমার অভিনয় প্রতিভা মোটামুটি ভালো।
সুলেখক এবং সায়েন্স ফিকশনের তুখোড় গল্পকার মোস্তফা তানিম যখন যুক্তি দিয়ে আমাকে বোঝালেন, কেন আমার লেখালেখি করা উচিত- আমি গভীর মন দিয়ে সেটি শুনলাম এবং অভিনয় করলাম, এর চেয়ে যুক্তিযুক্ত কথা আমার জীবনে শুনিনি। অভিনয় যথারীতি ভালো হলো। উনি বুঝতেও পারলেন না।
বাসায় ফিরে হঠাৎ মনে হলো, ভদ্রলোকে যে কথাটা বলেছেন, এটা অন্যদের চেয়ে আলাদা। শুধু তা-ই নয়, পৃথিবীতে এর চেয়ে খাঁটি কথা আর একটিও নেই।
গভীর কৃতজ্ঞতার কথা কখনো মুখে বলতে নেই। তাহলে বিষয়টা হালকা হয়ে যায়। তবু না পারছি না-মোস্তফা তানিম না থাকলে এই উপন্যাস আমার লেখা হতো না। উনি আমাকে লেখালেখিতে ফিরিয়ে আনলেন। আমার লেখকজীবন আমৃত্যু ওনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। প্রতিটি অধ্যায় লেখার পর উনি সেটি নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলেছেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। এই অনুপ্রেরণা অমূল্য।
নিশাত জাহান আমার পান্ডুলিপির দ্বিতীয় রিভিউকারী। মেয়েটি হৃদয়বতী হওয়া সত্ত্বেও পান্ডুলিপির নির্মম সমালোচনা করতে দ্বিধা করেনি। ভুলগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এই নিষ্ঠুরতার জন্য তাকে ধন্যবাদ।
সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে রিভিউ করেছেন শ্রদ্ধেয় লেখক আনোয়ার ইকবাল। তার প্রতিটি পরামর্শ আমি আমলে নিয়েছি।
আমার বইয়ের প্রথম অধ্যায় দেখেই মহাবিরক্ত হয়েছেন সৈয়দ ইকবাল হাসান অঞ্জন ভাই। দমক দিয়ে বলেছেন, এত ইংরেজি শব্দ কেন? বাংলা ভাষা কি এতই দুর্বল। তাকেও অশেষ ধন্যবাদ, এই শাসনটির প্রয়োজন ছিল। আমি পান্ডুলিপি যথাসম্ভব শোধরানোর চেষ্টা করেছি। এই তো-
আশীফ এন্তাজ রবি
আমার নাম আশীফ এন্তাজ রবি। জন্ম ২১ আগস্ট ১৯৭৭। তবে অন্য অনেকের মতাে আমারও একটা সার্টিফিকেট জন্মসাল আছে, ২৪.১০.১৯৭৯। নটরডেম কলেজে পড়ার সময় জনৈক বালিকাকে মুগ্ধ করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে একটা উপন্যাস লিখে ফেলেছিলাম। একদিন জলসিড়ি নামক উপন্যাসটি সেই বালিকাকে দ্রবীভূত করতে পারেনি। লেখক হিসেবে সেই দিন থেকেই আমি ব্যর্থ। ব্যর্থতাকে সহজভাবে মেনে নিয়ে আমি অন্য কাজকর্মে মনােনিবেশ করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর হুট করে বিয়ে করে ফেলি। সংসার চালানাের জন্য টিউশনির চেষ্টা করি। একটা টিউশনি জুটেও যায়। ছাত্র ইন্টারমিডিয়েটে বিজ্ঞানবিভাগে পড়ে। প্রথম দিন তাকে নিউটনের গতিসূত্র বােঝাই। মাস্টার হিসেবে আমি কেমন এটা, পরখ করার জন্য ছাত্রের বাবা পাশে বসে ছিলেন। ছাত্রটি নিউটনের গতিসূত্র চমৎকারভাবে ধরে ফেললেও তার ক্লাস এইট পাশ বাবা ব্যাপারটার আগামাথা কিছুই বুঝলেন না। কাজেই প্রথমদিনেই টিউশনি থেকে বাদ পড়ে গেলাম। এরপর শুরু করলাম পত্রিকায় লেখালেখি। শুধু টাকার জন্য প্রথম আলাে পত্রিকায় দুই হাতে লেখা শুরু করলাম। সেই লেখালেখির জেরেই যুগান্তর পত্রিকায় চাকরি পেয়ে যাই । টানা ১৩ বছর সেখানে সাংবাদিকতা করি। যুগান্তরে থাকার সময় জনৈক প্রকাশক আমার সাথে যােগাযােগ করেন। তিনি আমার একটি বই বের করতে চান। পুরনাে ব্যর্থতার কথা ভুলে আমি বই বের করতে রাজি হয়ে যাই। চার মাস ঘুরানাের পর চারটি ছােট গল্প তার হাতে তুলে দেই। প্রকাশক বিরস বদনে বলেন, এইটুকু দিয়ে তাে দুই ফর্মাও হবে না। প্রকাশককে উদ্ধার করার জন্য আমি আরও দুইজন তরুণ লেখককে জোগাড় করি, যারা লম্বা লম্বা গল্প লিখতে পারেন। তিনজনের বারােটি গল্প মিলে বের হয়, তিন তরুণের গল্প। এরপরের বছর একই কায়দায় ত্রয়ী নামে আরেকটি গল্পগ্রন্থ। বের হয়। আশ্চর্যজনকভাবে প্রথম বই তিন কপি, দ্বিতীয় বইটিও। সর্বমােট তিন কপি বিক্রি হয়। লেখক তিনজন থাকায় এই দারুন সাফল্য। তিনে মিলে করি কাজ, হারিজিতি নাহি লাজ।
এরপর টানা আট বছর আমি কোনাে বই ফাঁদার কথা স্বপ্নেও। ভাবিনি। তবু স্বভাবদোষে বের হলাে, কাগজের নৌকা। এখন নৌকাডুবির অপেক্ষা। লেখক পরিচিতিতে ভালাে ভালাে কথা লেখার নিয়ম। অধিকাংশক্ষেত্রে লেখক নিজেই নিজের ঢােল ফাটিয়ে ফেলেন। আমার কোনাে ঢােল নেই, তাই ফাটাতে পারলাম না। আমি দুঃখিত।