“চিলিতে গোপনে” বইয়ের ভূমিকা: ১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, চিলির আধুনিক ইতিহাসের এক অন্ধকারময় দিন। সালভাদর এলেন্দের বামপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে সেনাধ্যক্ষ পিনোচোতের সামরিক বাহিনী এক হিংস্ৰ অভু্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করে। রাষ্ট্রপতির প্রাসাদের মধ্যেই বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে এলেন্দে নিহত হন। চিলিতে নেমে আসের ফ্যাসিস্ট শাসন। বহু মানুষকে প্রকাশ্যে বা গোপনে খুন করা হয়, রাতের অন্ধকারে অনেকে লোপাট হয়ে যান, আরও কয়েক হাজার মানুষ নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। বিশেষ করে কমিউনিস্ট, সোশ্যালিস্ট ও বামপন্থী গণতন্ত্রীদের উপর আক্রমণ ছিল কেন্দ্রীভূত। চিলির সামরিক জুণ্টা দেশের মানুষের বিরুদ্ধে এমন কোনো অপরাধ নেই যা করেনি। চিলির বিখ্যাত চিত্রপরিচালক মিগুয়েল লিটিন অভু্যুত্থানের পরেই দেশ থেকে নির্বাসিত হন। পরে তার নাম স্থান পায় অবাঞ্ছিত ব্যক্তিদের ঘোষিত তালিকায়। বারো বছর পর মাদ্রিদ থেকে ছদ্মবেশে, মিথ্যা নামে, অন্যের পাসপোটে, এমনকী সাজানো বউ নিয়ে গোপনে চিলিতে ঢুকেছিলেন লিটিন সামরিক শাসনের বিপর্যয়কর পরিবেশে নিজের দেশ আর দেশের মানুষকে নিয়ে একটি ফিল্ম করতে। ছ’সপ্তাহ তিনি চিলিতে ছিলেন। সামরিকবাহিনী ও গোয়েন্দাদের জাল এড়িয়ে, সারা দেশে ঘুরে, তার কাজ শেষ করে শেষপর্যন্ত ফিরেও এসেছিলেন। সেই কাহিনী তিনি মুখেমুখে শুনিয়েছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্বনামধন্য ঔপন্যাসিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজকে। মার্কেজ সেই রোমাঞ্চকর সাহসিকতায়ভরা অভিযানকে ফুটিয়ে তুলেছেন ক্ল্যিাণ্ডেসটাইন ইন চিলি” গ্রন্থে। আমি চিলিতে যাইনি, কিন্তু চিলির যন্ত্রণা অনেকের মত আমাকেও পেয়ে বসে। মিগুয়েল লিটিনের সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ হয়েছিল কিছুদিন আগে কলকাতায় “নন্দনে’। লিটিনের তৈরি ফিল্ম দেখেছি, কিন্তু চিলির উপর তার তথ্যচিত্রটি, আমার দেখা হয়নি। আর মার্কেজের লেখাটি তার সব লেখার মতনই বাস্তবতা-অলৌকিকতার হাত ধরাধরি করে অসম্ভব আকর্ষণীয়। সেইজন্যই এই অনুবাদ। ভালমন্দ বিচারের ভার পাঠকদের ওপর।