ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ ক্যান্সার শব্দটির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত মৃত্যুভয় । সভ্যতার এই চূড়ান্ত বিকাশের যুগেও চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পূর্ণভাবে অসহায় ঘাতকব্যাধি ক্যান্সারের আক্রমণ মৃত্যুর আগেই মানুষকে নিক্ষেপ করে মৃত্যুর অতল কালো গহ্বরে। লেখক জাহানারা ইমাম, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যাঁর সন্তান ও স্বামী শহীদ হয়েছেন, মৃত্যুকে যিনি কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন সেই সময়ে, যে মৃত্যু তাঁকে তখন স্পর্শ করতে পারেনি। ক্যান্সার তাঁকে আক্রমণ করেছে বিরাশিতে। অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে তিনি রুখে দাঁড়িয়েছেন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে, যেভাবে মৃত্যুকে তিনি রুখেছিলেন একাত্তরে। চিকিৎসকদের সহযোগিতায় তিনি ক্যান্সারের প্রথম ও দ্বিতীয় আক্রমণকে পর্যুদস্ত করেছেন চড়া মূল্যে। শুধু অর্থের পরিমানে চড়া নয়, অপরূপ লাবণ্যময়ী এই নারী হারিয়েছেন তাঁর মুখশ্রীর অনিন্দ্য সৌন্দর্য। গত দশ বছর ধরে তিনি বসবাস করছেন তাঁর দ্বিতীয় যুদ্ধের কথা ‘ক্যান্সারের সাথে বসবাস’ গ্রন্থে।শুধুমাত্র মহৎ শিল্পীরাই পারেন মৃত্যু সম্পর্কে এতকানি নির্মোহ হতে, যা যে কোনো মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে মৃত্যুভয় অতিক্রম করতে। একই সঙ্গে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষেরও সহযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবে এই গ্রন্থ।
জাহানারা ইমাম
জন্ম ৩ মে ১৯২৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুর গ্রামে। তিনি কলকাতার লেডি ব্রেবাের্ন কলেজ থেকে বি.এ. ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম.এ. পাশ করেন। ১৯৬০ সালে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে বি.এড. ডিগ্রি অর্জন করেন। ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় সানডিয়াগাে স্টেট কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে ‘সার্টিফিকেট-ইন-এডুকেশন’ ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষিকা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী গার্লস হাই স্কুলে। ঢাকায় সিদ্ধেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন ৮ বছর। ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ২ বছর টিচার্স ট্রেনিং কলেজে অধ্যাপিকা হিসেবে চাকরি করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা ইনস্টিটিউটে খণ্ডকালীন প্রভাষক ছিলেন। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। খেলাধুলা, নাটক, সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন সমিতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। খাওয়াতীন’ নামে মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। দৈনিক বাংলায় কলাম লিখতেন। পৃথিবীর বহুদেশ ভ্রমণ করেছেন।
বাবা : সৈয়দ আব্দুল আলী ব্রিটিশ সরকারের অধীনে ‘বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা সাব-ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট
মা : সৈয়দা হামিদা আলী।
স্বামী : শরীফ ইমাম, প্রকৌশলী
পুত্র : শহীদ মুক্তিযােদ্ধা শাফী ইমাম রুমী সাইফ ইমাম জামী।
এই মহীয়সী নারী ২৬ জুন ১৯৯৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। পুরস্কার : বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পুরস্কার-১৯৮৭, কমর মুশতরী সাহিত্য পুরস্কার-১৯৮৮, বাংলা একাডেমী সাহিত্য। পুরস্কার-১৯৯১, নারী গ্রন্থ প্রবর্তনা-১৯৯৪ (ক্রেস্ট), আজকের কাগজ-১৯৯৪ (পদক), গুণীজন সম্মাননা-১৯৯৪ কারমাইকেল। কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ-১৯৯৫ (ক্রেস্ট), স্বাধীনতা পদক-১৯৯৭, বেগম রােকেয়া পদক-১৯৯৮, অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-২০০১, ইউনিভার্সাল শিল্পগােষ্ঠী-২০০১ (ক্রেস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ-২০১১ (ক্রেস্ট) লাভ করেন।