বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মধ্যে জীববিজ্ঞান এক রােমাঞ্চকর বিষয়। পৃথিবীতে জীবনের উদ্ভব ও তার বৈচিত্র্য দেখে মানুষ অবাক হয়েছে। যে কোন বিষয় থেকে জীবের প্রতি মানুষের কৌতুহল অনেকটা বেশি। কীভাবে পৃথিবীতে জীবনের উদ্ভব হল, কীভাবে জৈব অভিব্যক্তির মাধ্যমে আজকের এই বৈচিত্র্যময় পৃথিবীর সৃষ্টি, কিভাবে জীব পরিবেশের সাথে ক্রিয়া করেএমন প্রশ্নের শেষ নেই। এ সকল প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টায় বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর ধরে গবেষণা করছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞানীরা জীবের বাহ্যিক গঠনের পাশপাশি আণুবীক্ষণিক গঠন নিয়ে গবেষণা করছেন। এর উপর ভিত্তি করে। জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন ফলিত শাখার সৃষ্টি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে বর্তমানে উন্নত দেশগুলাে জীব নিয়ে গবেষণায় অধিক গুরুত্ব। প্রদান করছে। অতটা ব্যাপক না হলেও বাংলাদেশে জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন। গবেষণার অগ্রগতির সাথে সাথে তারা অবাক হয়েছেন এই ভেবে যে একটি জীব কত বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। পৃথিবীতে কত প্রজাতির জীব রয়েছে তার সঠিক কোন হিসাব নেই। স্থলভাগে জীবের প্রকৃতি আমরা দেখলেও সমুদ্রের নিচে জীবের এক বিশাল জগৎ রয়েছে। তবে বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন জীব অনুসন্ধানে গবেষণা করে যাচ্ছেন। আর আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রজাতির জীবের সন্ধান পাচ্ছি। বাহ্যিকভাবে জীবের রূপ দেখে অবাক হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তবে এর আণুবীক্ষণিক গঠন আরও মুগ্ধ করে। জীব গঠনের মূল একক কোষ যা খালি চোখে দেখা যায় না। আবার এর। অভ্যন্তরে রয়েছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অসংখ্য অঙ্গাণু । তাদের পারস্পারিক সুশৃঙ্খল ক্রিয়ার মাধ্যমে জীবের সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। জীব নিয়ে গবেষণায় নতুন নতুন তথ্য আহরণের পাশপাশি জীবন সম্পর্কে আমরা ধারণা লাভ করতে পারি। তাই । বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিতে জীব সম্পর্কিত জ্ঞান লাভের কোন বিকল্প নেই। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গবেষণা ও তাদের প্রভাব সম্পর্কে অবহিত হতে জীববিজ্ঞান সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকা জরুরি। বর্তমানে বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জীববিজ্ঞানের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ, বিজ্ঞান মেলায় জীববিজ্ঞান সম্পর্কিত প্রকল্প প্রদর্শন, নতুন নতুন গবেষণা ও তথ্যের প্রতি আগ্রহ এটা প্রমাণ করে আমাদের নতুন প্রজন্ম জীববিজ্ঞান নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহী । তাদের আগ্রহের মাত্রাকে বহুগুণে বাড়িয়ে জীববিজ্ঞান বিষয়ে আকৃষ্ট করতে জীববিজ্ঞান বই পাঠের কোন বিকল্প নেই। বিদেশি ভাষায় জীববিজ্ঞানের অসংখ্য বই থাকলেও বাংলা ভাষায় এমন বই হাতেগােনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান বইটি সত্যিই শিক্ষার্থীদের জীববিজ্ঞানের প্রতি আরও আগ্রহী করে তুলবে। বিশ্বখ্যাত জীববিজ্ঞান বই ক্যাম্পবেল বায়ােলজি’র অনুসরণে রচিত এ বইটিতে বাংলাদেশের উপযােগী করে বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে। ক্যাম্পবেল বায়ােলজি এতটাই বিখ্যাত যে ১৯৮৭ সালে রচনার পর থেকে এ পর্যন্ত আটটি ভাষায় অনূদিত এবং দশটি সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় বইটি অনূদিত হলেও বাংলা ভাষায় এই প্রথম। বইটিতে বিভিন্ন বিষয় সহজভাবে উপস্থাপনের পাশাপাশি প্রয়ােজনীয় চিত্র সংযােজন করা হয়েছে যা শিক্ষার্থীদের বইটির প্রতি আকৃষ্ট করবে। একদিকে তারা তত্ত্বীয় বিষয় জানবে, অন্যদিকে এই অর্জিত জ্ঞান ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করতে পারবে। এ বিষয়টি নিশ্চিত যে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি অসাধারণ বই। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞান বিষয়ক অলিম্পিয়াড, কর্মশালা, সেমিনারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।