যে ভূখ-ে অন্ধকার গ্রাস করে জীবন, কুসংস্কার, প্রথাগত বিশ্বাস মানুষকে বিপন্ন করে, এবং এসবের সাথে যুক্ত হচ্ছে বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির বিষাক্ততা। সে-সব থেকে বেরিয়ে আসতে চায় যে মানুষেরা; কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য তারা স্পষ্ট করে সেসব কথা বলতে পারে না। সেইসব মানুষের অব্যক্ত যন্ত্রণার ভাষা, প্রচ্ছন্ন জনজীবন হয়ে ওঠে আকমল হোসেন নিপুর গল্পে জীবন্ত, গতিমান।
গ্রাম, নগর-জীবনের তিক্ততার স্বাদ তাঁর গল্পের অনুষঙ্গ। বাংলা ছোটগল্পে যে বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন ঘটে আশির দশকে, তার অন্যতম প্রতিনিধি আকমল হোসেন নিপু। গল্পের ভাষা শৈলীতে কবিতার মেজাজ থাকলেও গদ্যের ছন্দ হারিয়ে যায় না।
এই জনপদের লোকজীবনের হারিয়ে যাওয়া সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও জীবনচিত্র রূপায়িত করেন নৃতাত্ত্বিক মননে। সেখানে পাঠক গল্পপাঠে ক্লান্তি বোধ করে না। এই ব্যতিক্রমী ভাষাগত যোগসূত্রে গ্রাম ও নগর জীবনের খেটে খাওয়া চরিত্রগুলো গল্পে উঠে এসেছে। গ্রামীণ জনপদের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য, ফতোয়া, মোড়লকেন্দ্রিক রাজনীতি, সংস্কারগত জটিলতা ভীষণভাবে চেপে রয়েছে আমাদের জীবনে। উপমা, অলংকারে কাব্যিকতা থাকলেও গল্পের প্রতিবেদন মূল রেখা থেকে পাঠককে সরিয়ে রাখে না। শেষ পর্যন্ত জীবন ঘনিষ্ঠতা, সমাজসত্য, বহুমাত্রিক জীবনের ছবি খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর গল্পে।
আকমল হোসেন নিপু
ব্যক্তিগত জীবনে স্বল্পভাষী, মিতভাষী, পরিমিত বোধের মানুষ। গাল্পিক, কবি বা লেখক হিসেবেও সে পরিমিতি চিন্তনের পরিচয় তাঁর গল্পের অন্বিষ্ট। তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলো জীবন সংগ্রামে হারতে হারতে হয়ে ওঠে চিরায়ত এবং আশাবাদী। চলমান রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোর ফন্দি-কৌশলের কাছে সাধারণ মানুষ যে শৃঙ্খলিত, ক্রমশ নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়ার যাঁতাকলে অতিষ্ঠ; এতসব শোষণ বঞ্চনার বেদনা থেকে মানুষ মুক্তির দিগন্তে আসতে চায়। লেখকের বস্তুগত সত্যে রচিত গল্পগুলো সচেতন পাঠকের হৃদয়তন্ত্রীতে নাড়া দেয়। জন্ম: ধাইসার, মৌলভীবাজার, মার্চ ১৯৬২; পিতা: মৃত আব্দুল মবশ্বির; মা: জয়তু বেগম; পেশা: সাংবাদিকতা; প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ: জলদাসের মৎস্য ঘ্রাণ।